ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কা দেশের শেয়ারবাজারে

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দামামাতে ধাক্কা খেয়েছে অধিকাংশ শেয়ার বাজার। এই ধাক্কা থেকে রেহাই পায়নি দেশের শেয়ারবাজার। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার খবরে বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সাম্প্রতিক সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বড় দরপতন ঘটেছে শেয়ারবাজারে। এ দিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসই-এক্স ১০৯ পয়েন্ট কমে গেছে। চলতি বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত এটিই ডিএসই-এক্স সূচকের সর্বোচ্চ পতন। খবর বাংলা টিবিউন।

ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের প্রথম দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার বিশ্বের বড় শেয়ারবাজারগুলোতে সূচকের ব্যাপক পতন ঘটেছে। এর মধ্যে খোদ এই হামলা পরিচালনকারী রাশিয়ার শেয়ারবাজারের সূচক ৪৫ শতাংশ কমেছে। অবশ্য এমনিতেও গত কয়েক দিন ধরে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চলছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের ঋণাত্মক ঋণ হিসাবকে ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সমন্বয়ের নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে বাজারে এমনিতেই আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। সেই আতঙ্কের সঙ্গে বৃহস্পতিবার নতুন করে যুক্ত হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। তাতেই আতঙ্কিত বিনিয়োগকারীরা হুজুগে শেয়ার বিক্রি শুরু করেন।

এদিকে গত সপ্তাহজুড়েই পতনের আবর্তে আবর্তিত হয়েছে শেয়ারবাজার। এতে করে বাজার মূলধন কমেছে অন্তত ১০ হাজার কোটি টাকা। এদিকে বেশ কিছু শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের অনেকে আটকে গেছে।

দুই সপ্তাহে হারিয়ে গেলো ১৬ হাজার কোটি টাকা : বড় দরপতনের কারণে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন ১০ হাজার কোটি টাকা কমে গেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই সপ্তাহের পতনে ১৬ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে ডিএসই। সেইসঙ্গে কমেছে সবকটি মূল্যসূচক ও লেনদেনের পরিমাণ।

গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৫ কোটি টাকা, যা তার আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল পাঁচ লাখ ৬০ হাজার ৯২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ গত সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে ১০ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমে পাঁচ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা দুই সপ্তাহের পতনে বাজার মূলধন কমলো ১৬ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

দাম কমেছে ২৯৭টি শেয়ারের : সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৭৩টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৯৭টির। আর ১৭টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

সূচক কমেছে ১৫১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট : গত সপ্তাহে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স কমেছে ১৫১ দশমিক ৯২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯৪ দশমিক ৫৯ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি গত সপ্তাহে কমেছে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক। গত সপ্তাহজুড়ে এই সূচকটি কমেছে ৫৮ দশমিক ৮৭ পয়েন্ট বা ২ দশমিক ২৯ শতাংশ। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ২৩ দশমিক ৬৪ পয়েন্ট। প্রধান মূল্যসূচক ও ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত বাছাই করা সূচকের পাশাপাশি টানা দুই সপ্তাহ কমেছে ইসলামী শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচকও। গেলো সপ্তাহে এ সূচকটি কমেছে ৩২ দশমিক ৪২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমে ৯ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট।

প্রতিদিন লেনদেন ৯৯৬ কোটি টাকা : গত সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৯৯৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৯৩ কোটি ৪২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন কমেছে ১৯৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বা ১৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে মোট লেনদেন হয়েছে তিন হাজার ৯৮৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে লেনদেন হয় পাঁচ হাজার ৯৬৭ কোটি ১২ লাখ টাকা। সেই হিসাবে মোট লেনদেন কমেছে এক হাজার ৯৭৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা বা ৩৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। মোট লেনদেন বেশি হারে কমার কারণ ২১ ফেব্রুয়ারির কারণে গত সপ্তাহে শেয়ারবাজারে এক কার্যদিবস কম লেনদেন হয়।

সবচেয়ে বেশি লেনদেন বেক্সিমকোর শেয়ার : গত সপ্তাহে ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৯৫ কোটি ৬৭ লাখ ৬২ হাজার টাকা, যা মোট লেনদেনের ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ফরচুন সুজের শেয়ার লেনদেন হয়েছে ২৫২ কোটি ৩৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। ১৩২ কোটি ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার টাকা লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ফার্মা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.