পুঁজিবাজারে সূচক আর মূলধনে রেকর্ড

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও চমক ছিল পুঁজিবাজারে। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাজারে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজারে সূচক বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। পাশাপাশি বাজার মূলধন এবং লেনদেন বেড়েও সৃষ্টি হয় নতুন ইতিহাস। আগামীতে নতুন রেকর্ড গড়ার আগ পর্যন্ত ২০২১ সাল পুঁজিবাজারে ইতিহাস হয়ে থাকবে। খবর মানবজমিন।

সূত্র মতে, গত ১০ বছর পর ২০২১ সালজুড়েই দেশের পুঁজিবাজারে আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল বাজারের গতিশীলতা। বিদায়ী বছরে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে কঠোরতম লকডাউনের মধ্যেও ব্যাংকিং কার্যক্রমের সঙ্গে সংগতি রেখে দেশের পুঁজিবাজার চালু ছিল। নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেশের শেয়ারবাজার।

করোনার অতিমারির মধ্যেও প্রতিদিনই নিত্যনতুন রেকর্ড গড়ে শেয়ারবাজার। সামগ্রিক অর্থনীতিতে করোনার নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও চমক ছিল পুঁজিবাজার। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের তথ্যের ভিত্তিতে এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের এক প্রতিবেদনে পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিশ্বে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে দেশের পুঁজিবাজার।

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনা মহামারির সময় বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাজারের জন্য ইতিবাচক নানা পদক্ষেপ নেন। ফলে অতীতে যেসব বিনিয়োগকারী বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছিল তারা ফিরে এসেছে। বাজারে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। যা এক বছর পর ২০২১ সালে লেনদেনে, সূচক, বাজার মূলধনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। বৃদ্ধি পায় বিনিয়োগকারীদের আস্থা। এতে সব কিছুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যদিও সেটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে গত এক বছরে বাজারে সূচক বেড়েছে সাড়ে ১২০০ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ৮৭ হাজার কোটি টাকা। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাজার আরও নতুন ইতিহাস গড়বে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমান কমিশন যেভাবে কাজ করে যাচ্ছে তা ধারাবাহিক চলতে থাকলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। তবে কমিশনের মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। যাতে কেউ বাজারের স্বাভাবিক পরিবেশ নষ্ট করতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে বিএসইসি’র।

তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডিএসইএক্স অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়েছে। একই চিত্র ছিল বাজার মূলধন এবং লেনদেনেও। ডিএসইএক্স গত ১০ই অক্টোবর বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে, যা ৮ হাজার পয়েন্টকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সূচকের উত্থান ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত ৯ই সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। অতীতে কোনো সময় বাজার মূলধন এই পরিমাণ বাড়েনি। সেই সঙ্গে লেনদেনে রেকর্ড গড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।

পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের শুরুতে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট। ওই সময় বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। গত ১৫ই ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৮৬৮ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৫৯০ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ের ব্যবধানে সূচক বেড়েছে ১২৪৯ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন বেড়েছে ৮৬ হাজার ৯৫৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলেন, ২০২১ সালে বাজারে লেনদেন, সূচকে যে গতি ফিরে পেয়েছিল তা ভবিষ্যতেও ধরে রাখাতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে। তাহলে বাজারে স্বাভাবিক গতি বিদ্যমান থাকবে। এতে সব ধরনের বিনিয়োগকারীদের জন্য সুফল বয়ে আনবে বলে মনে করেন তারা।

বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি ডিএসই’র ডিএসইএক্স সূচক ছিল ৫৬১৮.৯৫ পয়েন্টে। আর ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডিএসইএক্স সূচক অবস্থান করছে ৬৮৬৮.১৭ পয়েন্টে। ফলে প্রায় এক বছরের ব্যবধানে ডিএসইএক্স সূচক বেড়েছে ১২৪৯.২২ পয়েন্ট। তবে চলতি বছরে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ডিএসইক্স সূচক ৭ হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে নতুন রেকর্ড গড়েছে। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর ডিএসই’র ডিএসইএক্স সূচক ৭ হাজার ৩৪৭.৯৯ পয়েন্টে স্পর্শ করে সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়েছে।

শেয়ারবাজার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, গত এক বছরের শেয়ারবাজারের উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় নতুন কমিশন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে গত এক বছরে শেয়ারবাজারে সূচক, লেনদেন ও বাজার মূলধন বেড়েছে। সে হিসেবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর শেয়ার বাজার ভালো অবস্থানে রয়েছে। সব মিলিয়ে শেয়ার বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীর আস্থা বেড়েছে।

বিনিয়োগকারীরা বলেন, যোগ্য নেতৃত্বের কারণে দীর্ঘদিনের আস্থার সংকট দূর করে শেয়ার বাজারকে ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে এনেছে বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারের ওপর হারানো আস্থা ফিরে পেয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। শেয়ারবাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ অনেকটাই কমেছে। ফলে, চলতি বছরে কমেছে বিনিয়োগকারীদের বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার পরিমাণ।

শেয়ারবাজারের তথ্যভাণ্ডার হিসবে পরিচিত সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৩১শে ডিসেম্বর বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবের সংখ্যা ছিল ২৫ লাখ ৩৮ হাজার ৩৩৩টি। ১৫ই ডিসেম্বর পর্যন্ত বিনিয়োগকারীদের মোট বিও হিসাবে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ১৭ হাজার ১৫৩টি। সে হিসেবে বিও হিসাব ৫ লাখ ২১ হাজার ১৮০টি বা ২০.৫৩ শতাংশ।

ডিএসই’র পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, বাজারে মন্দাভাব থাকায় কিছু কিছু বিনিয়োগকারী তাদের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করে সাইড লাইনে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে একটি অংশ হয়তো বাজার থেকে একেবারে চলে গেছেন। আরেকটি অংশ চুপচাপ বসে থেকে বাজার পর্যবেক্ষণ করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.