বেক্সিমকো গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : বেক্সিমকো গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে আসছে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। বিমা খাতের এই প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে বেক্সিমকো গ্রুপের পাঁচ জন প্রতিনিধি যুক্ত হচ্ছেন। একই সাথে পর্ষদে নতুন করে আরও কয়েকজন স্বতন্ত্র পরিচালক যুক্ত হবেন বলে জানা গেছে।

পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা-বিএসইসি সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এবং ডিএসই, সিএসই ও সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর পাঠিয়ে অবহিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান, সদ্য নিয়োগ দেওয়া স্বতন্ত্র পরিচালক এবং মনোনীত পরিচালকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বিএসইসি।

এর আগে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জারি করা চিঠিটি এই চিঠি জারির পর বাতিল বলে গণ্য হবে বলে জানিয়েছে কমিশন।

বিএসইসির চিঠিতে বলা হয়েছে, বিনিয়োগকারী এবং পুঁজিবাজারের বৃহত্তর স্বার্থে কমিশন ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের পুনর্গঠনে সম্মতি দিয়েছে। ছয় ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র পরিচালক এবং চারজনকে শেয়ার ধারণের মাধ্যমে মনোনীত পরিচালক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেক্সিমকো গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান জুপিটার বিজনেস লিমিটেড ও ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। এর মধ্যে জুপিটার বিজনেস লিমিটেড ৯ দশমিক ৯০ শতাংশ ও ট্রেডেনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ৯ দশমিক ৯১ শতাংশ শেয়ার রয়েছে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির। এ হিসাবে বেক্সিমকো গ্রুপের এই দুই প্রতিষ্ঠান ইসলামী লাইফের ২ শতাংশের বেশি শেয়ার ধারণ করে আছে।

জানা গেছে, বেক্সিমকো গ্রুটের দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে পাঁচ জন প্রতিনিধি ফারইস্ট লাইফের পর্ষদে যুক্ত হবেন। এর মধ্যে ট্রেডনেক্সট ইন্টারন্যাশনাল লিমেটেডের পক্ষ থেকে পর্ষদে যাবেন শান্তা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান আরিফ খান ও বেক্সিমকো গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক মোস্তফা জামানুল বাহার।

অন্যদিকে জুপিটার বিজনেস লিমিটেডের পক্ষে পর্ষদে যুক্ত হবেন বেক্সিমকো ফার্মাসিটিউক্যালসের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) আলী নেওয়াজ, বেক্সিমকো টেক্সটাইলের মহা-ব্যবস্থাপক মাসুদ মিয়া ও ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম চৌধুরী।

এ বিষয়ে রোববার রাতে ফারইস্ট লাইফের বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের স্বতন্ত্র পরিচালক ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেন, প্রতিষ্ঠানটিকে ডুবন্ত অবস্থায় থেকে টেনে তুলতে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। আমরা সেই দায়িত্ব পালন করেছি। এখন মার্কেটে কাদের কতো শেয়ার আছে, সে অনুযায়ী বোর্ডে আসবে। কে আসবে, কারা আসবে আসবে-সে বিষয়ে আমি কিছু জানি না।

ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পর্ষদ ফের পুনর্গঠনের শর্তগুলো মধ্যে আছে—পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদের শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের বিষয়ে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদের সম্মতি থাকবে। সেই সঙ্গে পরবর্তী সাধারণ সভায় পোস্ট-ফ্যাক্টো হিসেবে শেয়ারহোল্ডারদের অনুমোদন নিতে হবে। এছাড়া এজন্য তাদেরকে কোম্পানিটির মনোনীত পরিচালক নির্ধারণ করতে হবে।

কোম্পানিটির পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কমিশনের নূন্যতম শেয়ার ধারণের নির্দেশনা অনুযায়ী কমপক্ষে স্বতন্ত্রভাবে পরিচালকদের ২ শতাংশ এবং কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের দ্বারা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার বজায় রাখার বিষয় নিশ্চিত করতে হবে৷

অপরদিকে, উপরোক্ত শেয়ারসহ কোম্পানির উদ্যোক্তা এবং পরিচালকদের হাতে থাকা সমস্ত শেয়ার ব্লক-মডিউলের অধীনে লক-ইন থাকবে।

গত বছরের সেস্টেম্বরে ফারইস্ট ইসলামী লাইফের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ১০ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেয় কমিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক রহমত উল্লাহকে পুনর্গঠিত পর্ষদের চেয়ারম্যান করা হয়। কোম্পানিটির পর্ষদে নিয়োগ পাওয়া অন্য স্বতন্ত্র পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ সানাউল্লাহ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী ও প্রধান পরামর্শক মোহাম্মদ সানাউল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম, সরকারের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব মো. মোফাজ্জল হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা কর্নেল গাজী মো. খালিদ হোসেন, স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পার্টনার স্নেহাশীষ বড়ুয়া, ৭১ টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক, জি সেভেন সিকিউরিটিজের চেয়ারম্যান সাজেদুর রহমান, জনতা ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিকরুল হক এবং নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সাবেক চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম চৌধুরী।

পুনর্গঠিত পরিচালনা পর্ষদ পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে কোম্পানিটির শীর্ষ ব্যবস্থাপনা পুনর্গঠনের পাশাপাশি নগদ অর্থ ও সম্পদ ফেরত আনতে বলা হয়। এছাড়া যারা গত ১০ বছরে কোম্পানিটিতে আর্থিক অপরাধ ও মানি লন্ডারিং করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছিল।

নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগে গত বছর ১৫ সেপ্টেম্বর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ হেমায়েত উল্লাহকে অপসারণ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

আর্থিক অনিয়মের কারণে শেয়ারবাজার বিএসইসি গত বছর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের আর্থিক প্রতিবেদন বিশেষ নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়। বিশেষ নিরীক্ষায় আর্থিক অনিয়মের পাশাপাশি মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়টিও উঠে আসে। ফলে বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করতে আরো যাচাই-বাছাইয়ের স্বার্থে গত বছরের আগস্টে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) সদস্যদের সমন্বয়ে একটি যৌথ অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি।

বিএসইসির বিশেষ নিরীক্ষায় উঠে এসেছে ফারইস্ট লাইফের মালিকরা গ্রাহকদের ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফারইস্ট লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেময়েত উল্লাহ এবং পরিচালক এম এ খালেক যৌথভাবে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য এরা জাল নথি পর্যন্ত করেছেন। এর মধ্যমে ২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। একই সাথে টাকাগুলো তারা বিদেশে পাচার করেছে। তারা তিনজন যৌথভাবে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.