শেয়ারবাজারে বিশেষ ফান্ডের ৩৬ ব্যাংকের বিনিয়োগ ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক :শেয়ারবাজার থেকে অস্থিরতা দূর করার লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তহবিল হিসেবে ২০০ কোটি টাকার ফান্ড গঠনের পরামর্শ দিয়েছিল নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। সেই ফান্ড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে তারল্য প্রবাহ বৃদ্ধি করে অস্থিরতা দূর করার কথা ছিল। এর মধ্যে ৩৬টি ব্যাংক ৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার সেই ফান্ড গঠনও করেছে। কিন্তু সেই ফান্ড সেকেন্ডারি মার্কেটের বদলে বন্ড মার্কেটে অর্থাৎ বেক্সিমকো সুকুকেই ১৪০০ কোটি টাকাই বিনিয়োগ করেছে।

ব্যাংকগুলোর এই বিশেষ ফান্ডের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো সেকেন্ডারি মার্কেটকে সাপোর্ট দেওয়া। তার জন্যই ব্যাংকগুলোকে ফান্ড গঠন করতে বলা হয়েছে। আর সেই ফান্ডর বেশ বড় একটা অংশই ব্যাংকগুলো বিনিয়োগ করেছে বেক্সিমকো সুকুকে। এতে করে ব্যাংকগুলোর সেকেন্ডারি মার্কেটে বিনিয়োগ কমে গেছে। অন্যদিকে, যে লক্ষ্যে বিশেষ ফান্ড গঠন করা হয়েছে, তাও সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। কারণ সেকেন্ডারি মার্কেটের ফান্ড চলে গেছে বন্ড মার্কেটে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মার্চ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ৩৬টি ব্যাংক সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করেছে। যার মধ্য থেকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেছে ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এই বিনিয়োগ থেকে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকারও বেশি গেছে সম্প্রতি তালিকাভুক্ত হওয়া বেসরকারি খাতে দেশের প্রথম সুকুক বন্ড বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক আল ইস্তিসনায়।

অবশ্য বেক্সিমকোর সুকুকে ব্যাংকগুলোর মোট বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ২২০ কোটি টাকা, যা বন্ডটির মোট আকারের ৭৪ শতাংশ। শেয়ারবাজারের জন্য গঠিত বিশেষ তহবিলের বাইরে আরও প্রায় ৯০০ কোটি টাকা নিজস্ব তহবিল থেকে বিনিয়োগ করেছে ব্যাংকগুলো।

বিশেষ তহবিল থেকে সুকুকে ব্যাংকের বিনিয়োগের কারণে অন্যান্য তালিকাভুক্ত শেয়ার প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ কিছুটা কমে গেছে। গত নভেম্বরে বিভিন্ন শেয়ারে বিশেষ তহবিল থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা, যা এখন প্রায় ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকায় নেমেছে।

গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে শেয়াবাজারের জন্য ব্যাংকগুলোর গঠন করা বিশেষ তহবিলের ৭০ শতাংশ সৌর, বায়ু, জল, বায়োমাসের মতো নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে বেসরকারি উদ্যোক্তার আনা গ্রিন সুকুক বন্ডেও বিনিয়োগ সুযোগ দেওয়া হয়। এজন্য বিশেষ তহবিলের মেয়াদ ২০২৫ সাল থেকে বাড়িয়ে ২০২৮ সাল পর্যন্ত করা হয়। ব্যাংকগুলোর এই বিনিয়োগ শেয়ারবাজারে ব্যাংক কোম্পানি আইনের বর্ণিত বিনিয়োগ গণনার বাইরে থাকবে।

এর আাগে ২০২০ সালের শুরুতে শেয়ারবাজারের টানা দরপতন সামাল দিতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য তহবিল গঠন সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী তফসিলি ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ড রেপোর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সর্বোচ্চ ২০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিশেষ তহবিল গঠন করতে পারে। ব্যাংকগুলো চাইলে নিজস্ব উৎস থেকেও এমন তহবিল গঠন করতে পারে। যদিও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে পৃথকভাবে ২০০ কোটি টাকার তহবিল গঠনের নির্দেশনা থাকলেও অধিকাংশ ব্যাংক তা পালন করেনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠনের সুযোগ হয়।

এছাড়ও, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এরই মধ্যে জানতে চেয়েছে কতগুলো ব্যাংক বিশেষ ফান্ড গঠন করেছে। এই ফান্ড থেকে ব্যাংকগুলো বাজারে কি পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। তথ্য জানতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর এবং ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএসইসি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.