সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংক-বিএসইসি সমঝোতা সই

0

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বিও অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবেন।

আজ রবিবার (১২ জুন) দুপুরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের উদ্যোগে রাজধানীতে স্টক এক্সচেঞ্জ ট্রেডিং প্ল্যাটফর্মে সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চিটাগং স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) মধ্যে এই সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই চুক্তির ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা শেয়ারবাজারের স্টক ব্রোকারের মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ বিও আইডিতে কেনাবেচা করা যাবে। সরকারি সিকিউরিটিজের অভিহিত মূল্য হবে ১০০ টাকা এবং মার্কেট লট হবে এক হাজার অর্থাৎ ন্যূনতম এক লাখ টাকা অভিহিত মূল্যের সিকিউরিটিজ লেনদেন করা যাবে।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বিনিয়োগকারীরা ইল্ড অথবা প্রাইস দর উল্লেখপূর্বক সিকিউরিটিজ কেনাবেচা করতে পারবেন। বিক্রেতা বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে অ্যাকুয়ার্ড ইন্টারেস্ট পাবেন এবং ক্রেতা বা বন্ডহোল্ডার কুপন ডেটে কুপনের অর্থ ব্যাংক একাউন্টে বিইএফটিএনের মাধ্যমে জমা পাবেন। এতে ক্রেতা-বিক্রেতার কারও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পোর্টফোলিওতে ঝুঁকিবিহীন সরকারি সিকিউরিটিজ অন্তর্ভুক্ত করতে পারবেন। তাদের পোর্টফোলিও ঝুঁকি কমে যাবে। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে অভ্যন্তরীণ খাত হতে অর্থ সংগ্রহের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে। ফলে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। এর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট তৈরি হবে।

চুক্তিতে বিএসইসির পরিচালক আবুল কালাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক (ডিএমডি) খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান, ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আমিন ভূইয়া, সিএসইর ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম ফারুক এবং সিডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ্র কান্তি চৌধুরী নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারকে সই করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, ‘পুঁজিবাজার এবং মুদ্রাবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সম্মিলিতভাবে কাজ করলে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতি ও প্রবৃদ্ধির আরও উন্নতি হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসির এই পদক্ষেপকে একত্রে কাজ করার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি লেনদেন স্টক এক্সচেঞ্জ প্লাটফরমে করার মাধ্যমে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে উঠবে এবং পুঁজিবাজারের বাজার মূলধন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, ‘একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট গড়ে উঠলে ব্যাংক ঋণের উপর নির্ভরতা কমে আসবে। নন পারফর্মিং লোন (এনপিএল) কমে আসবে। বর্তমান ১৬ শতাংশ মার্কেট ক্যাপিটাল টু জিডিপি রেশিও-কে দ্বিগুণ করা সম্ভব হবে।’

দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএসইসি ভবিষ্যতেও একত্রে সমন্বয় ও পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমে কাজ করে যাবে বলেও আশার কথা বলেন রউফ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ অনুষ্ঠানে বলেন, ‘সরকারি সিকিউরিটিজের সেকেন্ডারি ট্রেডিংয়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এই সমঝোতার মাধ্যমে সরকারি সিকিউরিটিজ পুঁজিবাজারে সেকেন্ডারি ট্রেডিংয়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। ফলে একটি প্রাণবন্ত বন্ড মার্কেট তৈরি হবে।’

শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান, সিডিবিএল এমডি শুভ্র কান্তি চৌধুরী, সেন্ট্রাল কাউন্টারপাটি বাংলাদেশ লিমিটেডের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম শিকদার, ডিএসইর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান ও সিএসইর চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিমও এ সময় বক্তব্য রাখেন।

অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (টিডিএম) রেহানা পারভীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন। সরকারি সিকিউরিটিজ লেনদেন চালুকরণ কার্যক্রম বিষয়ে যৌথভাবে একটি উপস্থাপনা পেশ করেন বিএসইসির অতিরিক্ত পরিচালক শেখ লুৎফুল কবির ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আনোয়ার হোসেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.