সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আনার উদ্যোগ

0

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো চলতি বছর সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকার বেশি ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। ডিভিডেন্ডের এই অর্থ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আনতে চায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

ক্যাশ ডিভিডেন্ডের অর্থ সাধারণত বিনিয়োগকারীদের ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। তবে বিএসইসি চায় ডিভিডেন্ডের অর্থ গ্রাহকের বিও হিসাবে জমা হোক। এতে ডিভিডেন্ডের অর্থ শেয়ারবাজারে পুনরায় বিনিয়োগে আসার সুযোগ তৈরি হবে। বিষয়টি নিয়ে কাজও করছে কমিশন।

বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা এ বিষয়টা নিয়ে সম্প্রতি কমিশন মিটিংয়ে আলোচনা করেছি। আমরা এটার সুবিধা, অসুবিধা দুটোই দেখব। তারপর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে জুন ক্লোজিং, কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন ও দুই-একটি ২১ সালের ডিসেম্বর ক্লোজিং বিমা কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এ পর্যন্ত ২১৫ কোম্পানি ৮ হাজার ৫৬৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে।

এর আগে চলতি বছরের ডিসেম্বর ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড সভা করা (জানুয়ারি-মে ২০২২) ৯০ কোম্পনির মধ্যে ৮২ কোম্পানি অন্তর্বর্তীসহ ৯ হাজার ৩০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

অপরদিকে আগের বছরে জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলোর মধ্যে (১ জুলাই-২৬ নভেম্বর ২০২১) পর্যন্ত সময়ে ২১৩ কোম্পানি ৮ হাজার ৫৯৫ কোটি ৮ লাখ টাকার ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছিল।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক হিসাবে ডিভিডেন্ড দেয়ার ফলে তা বেশিরভাগই শেয়ারবাজারে ফিরে আসে না। ব্যাংকে হিসাবে ডিভিডেন্ড চলে গেলে সেটা আবার ব্রোকারেজ হাউজে জমা দিতে ঝামেলা মনে করেন অনেকেই। অলসতা করেও অনেক ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বিওতে দিতে চান না।

এ ছাড়া দেশের শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী বেশি এবং তারা ডিভিডেন্ডও পান ছোট আকারের। যে কারণে তারা ওই স্বল্প ডিভিডেন্ড তুলে বিওতে জমা দেয়াকে পরিশ্রমের তুলনায় ফলপ্রসু মনে করেন না। এ কারণে ক্যাশ ডিভিডেন্ড শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয় না।

এই পরিস্থিতিতে ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আনার জন্য ব্যাংক হিসাবের পরিবর্তে বিও হিসাবে দিতে হবে। এতে করে হাজার হাজার কোটি টাকার তারল্য বাড়বে। যা বর্তমান সময়ে করতে পারলে শেয়ারবাজারের জন্য খুবই সহায়ক হবে।

এই বিপুল পরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণার পেছনে বর্তমান কমিশনের সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে। এ ছাড়া বাজেটে কমপক্ষে বোনাস শেয়ারের সমপরিমাণ ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অন্যথায় পুরো বোনাস শেয়ারের ওপরে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ হারে করারোপের শাস্তির বিধানের পাশাপাশি কমিশনের জেরার মুখে পড়তে হয়।

বর্তমান কমিশনের অধীনে ব্যবসা সম্প্রসারণ ছাড়া বোনাস শেয়ার দেয়া প্রায় অসম্ভব। এই বোনাস শেয়ার দিতে গেলে কমিশনের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে। এছাড়া নামমাত্র ডিভিডেন্ড দেয়া বা একেবারেই দেয় না এমন কোম্পানিগুলোকে ব্যাখ্যার জন্য কমিশনে তলব করা হয়। এসব কারণেই বোনাস শেয়ার দেয়ার প্রবণতা কমে এসেছে, বেড়েছে ক্যাশ ডিভিডেন্ডের পরিমাণ।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা পড়লে অনেকেই তা আর শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন না। বিও হিসাবে ক্যাশ অর্থ জমা পড়লে এর পুরোটা না হলেও বড় একটা অংশ শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হবে। এতে বাজারের সংকট উত্তরণে সহায়ক হবে। তবে এক্ষেত্রে আইনী জটিলতার বিষয়টি বিএসইসিকে খতিয়ে দেখার পরামর্শ দেন তারা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.