স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : দুর্নীতির দায়ে ডুবতে বসেছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত নন-ব্যাংক সাত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বিতরণ করা ঋণের সর্বনিম্ন ৪২ থেকে সর্বোচ্চ ৯৬ শতাংশই খেলাপি হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠান সাতটি হচ্ছে-বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিডেট, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিডেট, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড, প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেড এবং উত্তরা ফাইন্যান্স লিমিটেড।
এই সাত প্রতিষ্ঠান ছাড়াও শেয়ারবাজারের আরও ৪টি নন-ব্যাংক প্রতিষ্ঠানের অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, প্রাইম ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স এবং মাইডাস ফাইন্যান্স লিমিটেড। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) ঋণস্থিতি ছিল ১৬৪১ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় পুরো টাকাই খেলাপি (৯৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ) হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালকদের লুটপাট এবং অর্থ আত্মসাৎ করার প্রমাণ মিলেছে। বিষয়টি বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শন প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
এছাড়া ডিসেম্বর পর্যন্ত ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ঋণস্থিতি ছিল ৯৬৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৮৭১ কোটি ৭২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে।
একইভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের ঋণ ছিল ১৯২৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১৭১৪ কোটি টাকা। যা ৮৮ দশমিক ৯২ শতাংশ। ফার্স্ট ফাইন্যান্সের ঋণ ছিল ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৭৪২ কোটি টাকা। যা ৮২ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ঋণ ছিল ৪ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩২১০ কোটি টাকা। যা ৭৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের ঋণ ছিল ১৩৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
উত্তরা ফাইন্যান্সের ঋণ ছিল ২ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৪১ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
এছাড়া, ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ঋণস্থিতি ছিল ১১৭১ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ৩২০ কোটি টাকা বা ২৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রাইম ফাইন্যান্স খেলাপি ১৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ১৪ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং মাইডাস ফাইন্যান্সের ১৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। শুধু খেলাপি নয়, নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণেও ঘাটতি দেখা দিয়েছে এই ৪টি নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতিতে সব চেয়ে বেশি নাজুক অবস্থায় আছে এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড। ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির প্রভিশন সংরক্ষণ করার কথা ছিল ১০৬৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। করেছে মাত্র ১৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত এফএএস (ফাস) ফাইন্যান্সের প্রভিশন ঘাটতি ৮৭২ কোটি ৮১ লাখ টাকা। যা খুবই অস্বাভাবিক। একইভাবে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের প্রভিশন ঘাটতি ১৫৭ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রভিশন ঘাটতি ১৪০ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। শেয়াবাজারের আরেক প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাইন্যান্সের প্রভিশন ঘাটতি ৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ঋণস্থিতি দাঁড়িয়েছে ৬৭ হাজার ৩৫৪ কোটি ২২ লাখ টাকা। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে গেছে ১৩ হাজার ১৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। যা বিতরণ করা ঋণের ১৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।