১০‌ শতাংশের বেশি শেয়ার ছাড়লে কর্পোরেট কর ২০%

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের প্রয়াসে নতুন অর্থবছরের (২০২২-২৩) বাজেটে করপোরেট কর হার কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ জুন) অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে দেশের ৫১তম এবং নিজের চতুর্থ বাজেট প্রস্তাব তুলে ধরেন। এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম বাজেট।

প্রস্তাবিত এ বাজেটে অতালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে এক ব্যক্তি কোম্পানি প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করতে এক ব্যক্তি কোম্পানির কর হার ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ করা হয়েছে।

পুঁজিবাজারের উন্নয়ন ও বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার আইপিওর মাধ্যমে হস্তান্তর হলে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার সাড়ে ২২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে আইপিওর মাধ্যমে পরিশোধিত মূলধনের ১০ শতাংশ বা তার কম শেয়ার হস্তান্তর হলে কর হার সাড়ে ২২ শতাংশই থাকবে। এমনকি শর্ত পরিপালনে ব্যর্থ হলে কর হার বেড়ে ২৫ শতাংশ হবে।

এছাড়া তালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর হার আগের মতোই সাড়ে ৩৭ শতাংশ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। অতালিকাভুক্ত ব্যাংক, বিমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার হারেও পরিবর্তন আনা হয়নি। আগের মতো এসব প্রতিষ্ঠানকে ৪০ শতাংশ কর দেওয়ার প্রস্তাব করেছে অর্থমন্ত্রী। মার্চেন্ট ব্যাংকের কর হারও অপরিবর্তিত রেখে সাড়ে ৩৭ শতাংশ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

সিগারেট, বিড়ি, জর্দা, গুলসহ সব ধরনের তামাকজাত পণ্য প্রস্তুতকারী কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ ও আড়াই শতাংশ সারচার্জের প্রস্তাব করা হয়েছে। এক্ষেত্রেও কর হারে পরিবর্তন আনা হয়নি। অপরিবর্তিত রাখা হচ্ছে মোবাইল ফোন কোম্পানির কর হার।

চলমান অর্থবছরের মতো আগামী অর্থবছরের জন্য তালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির কর হার ৪০ শতাংশ এবং অতালিকাভুক্ত মোবাইল ফোন কোম্পানির কর হার ৪৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

তবে ব্যক্তি সংঘের করহার ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কৃত্রিম ব্যক্তিসত্তা ও অন্যান্য করযোগ্য সত্তার কর হারও ৩০ শতাংশ থেকে কমিয়ে সাড়ে ২৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ, বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ, বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বা কেবলমাত্র তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষাদানে নিয়োজিত বেসরকারি কলেজের কর হার চলমান অর্থবছরের মতো ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত ২৩ শতাংশ। উন্নত বিশ্বের কাতারে পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার এ অনুপাত বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। করপোরেট কর হার কমিয়ে বেসরকারি বিনিয়োগ জিডিপি অনুপাতের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব।

তিনি বলেন, অর্থনীতিতে নগদ লেনদেনের প্রাধান্য রাজস্ব আহরণের অন্যতম অন্তরায়। তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নগদ লেনদেন হ্রাস করা গেলে রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির সঙ্গে সামাজিক ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাসহ সমতাভিত্তিক এবং কল্যাণমুখী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

মুস্তফা কামাল বলেন, বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসারের লক্ষ্যে ২০২১ সালের অর্থ আইনে করপোরেট কর হার সাড়ে ৩২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩০ শতাংশ করা হয়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে করপোরেট কর হার আরও কমানোর প্রস্তাব করছি। এক্ষেত্রে সব ধরনের প্রাপ্তি ও আয় অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে গৃহীত হতে হবে এবং ১২ লাখ টাকার অতিরিক্ত ব্যয় ও বিনিয়োগ অবশ্যই ব্যাংক স্থানান্তরের মাধ্যমে সম্পাদন করতে হবে।

করোনাভাইরাসের অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়।

অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.