৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ বাতিল করল আইসিবি

0

 

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) নিজেদেরই নিয়ম ভেঙে ২৭টি কোম্পানিকে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করেছিল। সেসব ঋণ বাতিল ও স্থগিত করেছে সংস্থাটি।

বাতিল করা ঋণগুলো ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মার্চের মধ্যে অনুমোদন করেছিল আইসিবির বোর্ড। ঋণ বাতিলের ফলে বিপাকে পড়েছে কোম্পানিগুলো।

আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আবুল হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আইসিবিরি ফান্ড মূলত শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য। কিন্তু এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রকল্পে ঋণ দেওয়া হচ্ছিল। এই কারণেই ওগুলো বাতিল করা হয়েছে।’

আইসিবির তহবিল ওইসব প্রকল্পে দিলে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সম্ভব হতো না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আইসিবি’র এমডি আরও জানান, প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই ঋণ বাতিল করা হয়েছে। কোম্পানিগুলোকে বিকল্প উৎস থেকে অর্থ সংস্থানের জন্য বলা হয়েছে।

বাতিল করা ঋণের বিষয়টি গত ২১ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠানো এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল হোসেন।

এদিকে, আইসিবির এসব ঋণ মঞ্জুর ও বিতরণে কোন অনিয়ম হয়েছে কি না, এখন তা তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঋণ বাতিল হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি সুলতান হাবিবা ফেব্রিকস মিলস। ছয় বছর আগে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় সাদ মুসা ইন্ডাস্ট্রিয়াল শিল্প পার্কে নির্মাণাধীন সুলতানা হাবিবা ফ্রেব্রিকস মিলসের ডিবেঞ্চারে ৪৮৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আইসিবি।

ঢাকার প্রয়াত সংসদ সদস্য মো. আসলামুল হকের মালিকানাধীন ঢাকা ওয়েস্ট পাওয়ার লিমিটেডকেও ডিবেঞ্চারে ৪০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছিল আইসিবি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ঋণটি স্থগিত করার আগেই দুই কিস্তিতে ২২.২৩ কোটি টাকা ছাড় করেছে আইসিবি।

বেঙ্গল গ্যাস লিমিটেড নামক একটি কোম্পানির নামে ২০১৭ সালে ৯১.৯০ কোটি টাকা ডিবেঞ্চারে ঋণ মঞ্জুরের পর ২০.২০ কোটি টাকা ছাড় করে আইসিবি। বাকি অর্থ আর বিতরণ করেনি সংস্থাটি। ফলে প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন হয়নি।

বেস্ট হোল্ডিংস লিমিটেডের লা মেরিডিয়ান হোটেলে বন্ডে শুরুতে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করেছিল ড. মজিব উদ্দিন আহমদ ও মো. ইফতিখার-উজ-জামানের বোর্ড। পরের পর্ষদ তা সংশোধন করে ১৫০ কোটি টাকা মঞ্জুর করে পুরোটাই বিতরণ করেছে। কোভিডজনিত কারণে কোম্পানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই ঋণের গ্রেস পিরিয়ড ২ বছর থেকে অতিরিক্ত ৩ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে।

২০১৯ সালে কোম্পানিটির কাছ থেকে সুদ বাবদ ৪.০৪ কোটি টাকা আদায় করেছে আইসিবি। বর্তমানে বন্ড হিসাবটি ‘স্ট্যান্ডার্ড’ মানে শ্রেণিকৃত রয়েছে বলে জানিয়েছে আইসিবি।

শেয়ারবাজার থেকে মূলধন তুলতে আগ্রহী ওয়ানটেক্স লিমিটেডের প্লেসমেন্ট শেয়ারে ২০১৭ সালে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে আইসিবি। পরবর্তীতে নিজস্ব পোর্টফোলিও থেকে প্রি-আইপিও প্রাইভেট প্লেসমেন্টে ২০১৮ সালে আরও ১৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনে আইসিবি।

তবে সিকিউরিটিজ আইন পরিপালনের মাধ্যমে এখনো প্রতিষ্ঠানটি আইপিওতে আসতে পারেনি। ফলে কোনো টাকাই ফেরত আসছে না।

২০১৭ সালে এহসান পেপার প্রোডাক্টস প্রকল্পে ২৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্তের বিপরীতে দুই কিস্তিতে ৬ কোটি টাকা বিতরণ করে আইসিবি। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্থগিতাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ওই প্রকল্পে আর নতুন অর্থ দেয়নি আইসিবি।

প্রকল্পটি চলমান থাকলেও বিতরণকৃত অর্থের বিপরীতে ০.৯৯ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। আইসিবির মেয়াদোত্তীর্ণ পাওনার পরিমাণ ২.৭৮ কোটি টাকা। বর্তমানে এই ডিবেঞ্চারটি সাব-স্ট্যান্ডার্ড মানে শ্রেণিকৃত।

এছাড়া, আইসিবি ও এর সাবসিডিয়ারি কোম্পানি পরিচালিত মিউচ্যুয়াল ফান্ড সার্টিফিকেটের বিপরীতে অগ্রিম প্রদান, ব্যাংক গ্যারান্টি দেওয়া, ট্রাস্টি ও কাস্টডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব পালন, যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির অর্থায়নে অংশগ্রহণ, বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ সম্পর্কিত পরামর্শ দেওয়া, সরকারের পুঁজি প্রত্যাহার কাজে অংশ নেওয়া, বাজার চাহিদা উপযোগী নতুন ব্যবসা উদ্ভাবন, পুঁজিবাজার সংক্রান্ত অন্যান্য আনুষঙ্গিক কার্যক্রম, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল অর্থায়ন, মার্জার, এক্যুইজিশন এবং অ্যাসেট পুনর্গঠন কাজে সহায়তা দেয় আইসিবি।

ইক্যুইটি অ্যান্ড অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড (ইইএফ), অন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) এবং সময়ে সময়ে সরকার ঘোষিত বিশেষ তহবিল ব্যবস্থাপনা, হোল্ডিং কোম্পানি হিসেবে সাবসিডিয়ারি কোম্পানিগুলোর কাজ তত্ত্বাবধান করা এবং রাষ্ট্র-মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার অফলোড প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের কাজও করে আইসিবি।

আইসিবির পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ২০১৬ সালে চারটি কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ারের ১৫৬ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে তারা।

এর মধ্যে স্ট্র্যাটেজিক ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট পরিচালিত ১০০ কোটি টাকার এসএমইএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ডে ২৫ কোটি টাকা, ভ্যানগার্ড এএমএল পরিচালিত ভ্যানগার্ড রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ডে ২০ কোটি টাকা, জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডে ৮১ কোটি টাকা ও সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসে ৩০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে।

৩০ জুন ২০২২ পর্যন্ত জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেডের প্লেসমেন্টের মাধ্যমে পাওয়া ২.৭০ কোটি শেয়ারের বর্তমান দাম ২২১.৬৭ কোটি টাকা, আর সিলভা ফার্মাসিউটিক্যালসের ৩.১৫ কোটি শেয়ারের দাম ৬৯.১৭ কোটি টাকা।

এই দুটি কোম্পানিতে বড় মুনাফা করলেও বাকি দুটি কোম্পানিতে লোকসানে পড়েছে আইসিবি।

এসএমইএল আইবিবিএল শরীয়াহ ফান্ডে প্লেসমেন্টে পাওয়া ২.৫০ লাখ ইউনিটের বর্তমান মূল্য ১৯.৬৬ কোটি টাকা, আর ভ্যানগার্ড এএমএল রূপালী ব্যাংক ব্যালেন্সড ফান্ডের ২ কোটি ইউনিটের বর্তমান মূল্য ১৯.৬৬ কোটি টাকা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.