গ্রাহকের আস্থার কারণে জেনিথের ব্যবসার উন্নতি হচ্ছে

সাক্ষাৎকারে জেনিথ ইসলামী লাইফের সিইও

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশে ইসলামিক ইন্স্যুরেন্স শিল্প নিয়ে যারা খুব দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করে আসছেন এবং এই শিল্পকে একটি উন্নয়নশীল অবস্থানে অধিষ্ঠিত করেছেন, এস এম নুরুজ্জামান তাদের মধ্যে অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে তিনি এই শিল্পে নিয়োজিত আছেন এবং দৃঢ়তার সঙ্গে তার কর্মদক্ষতার স্বাক্ষর রাখতে সক্ষম হয়েছেন। মেঘনা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে যোগদানের মাধ্যমে তিনি বীমা শিল্পে ক্যারিয়ার শুরু করেন।

জেনিথ ইসলামী লাইফের মুখ্য নির্বাহীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই কোম্পানিটির অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছেন তিনি। সম্প্রতি তার প্রচেষ্টায় কোম্পানিটি সাড়ে ৪ কোটি টাকার শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে। এর ফলে কোম্পানিটির পুঁজিবাজারে আসার পথ সুগম হয়েছে। লকডাউন পরবর্তী সময়ে বীমা ব্যবসা ও জেনিথের পুঁজিবাজারে আসার পরিকল্পনাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন শেয়ারবাজারনিউজের সাথে। স্টকরিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হল।

লকডাউন পরবর্তী বীমা ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাই?
এস এম নুরুজ্জামান: লকডাউনের সময় বীমা অফিসগুলো বন্ধ ছিলো। বিশ্বজুড়েই এ সময় অর্থনৈতিক মন্দা চলেছে। ফলে মানুষের কাছে টাকা চাওয়া যায়নি। জেনিথ ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের জন্য একটা ইতিবাচক দিক হলো কোম্পানিটি শুরু থেকেই ডিজিটাল কোম্পানি। ডিজিটাল হওয়ার কারণে আমরা মোবাইল সার্ভিস যেমন বিকাশ, রকেট, নগদের মাধ্যমে আমাদের ক্লায়েন্টরা তাদের প্রিমিয়াম পরিশোধ করতে পেরেছে। লকডাউনের মধ্যে আমাদের কর্মকর্তারাও এই অ্যাপসগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে কার্যক্রম চালিয়ে নিতে পেরেছে।
আমাদের ওয়েবসাইটা বাংলায়। এটা কোনো লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নাই। বাংলার পাশাপাশি ওয়েবসাইটের ইংলিশ ভার্সনও রয়েছে। ফলে কোনো ব্যবহারকারী চাইলেই বাংলা থেকে ইংলিশ ভার্সনে যেতে পারেন। আমাদের অ্যাপসও বাংলা ভার্সনে তৈরি। ফলে মানুষের কাছে আমাদের অ্যাপস ও ওয়েবসাইট খুব পরিচিত। তাই সহজেই লেনদেনটা করতে পারে।
আর একটা বিষয়- আমাদের কোনো রেনুয়্যাল ক্লায়েন্টকে অফিসে আসতে হয় না। সে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের যে কোনো ব্র্যাঞ্চে টাকা জমা দিলেই হয়। ব্যাংক যে মানি রিসিটটা দেয় সেটাই আমাদের রিসিট হিসেবে বিবেচিত হয়।

প্রাইভেট প্লেসমেন্টের মাধ্যমে সাড়ে ৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাই।
এস এম নুরুজ্জামান: আমাদের ১৮ কোটি টাকা পেইডআপ ক্যাপিটাল আছে। ট্রেজারারি বন্ডে রয়েছে দেড় কোটি টাকা। প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিওতে যাওয়ার শর্ত হলো- সাড়ে ৪ কোটি টাকা মালিকদের কাছ থেকে নিতে হবে। আমাদের পরিচালকরা চিন্তা করেছেন এই শেয়ার যদি আমরা নিজেরা রাখি তাহলে তো আমরা আমরাই থাকলাম। যদি এটা বাইরে দিয়ে দিই তাহলে কোম্পানির স্বচ্ছতা বাড়বে। কিছু ভালো কোম্পানি বা ব্যক্তি আমাদের সাথে আসবে। এতে আমাদের ইমেজ বাড়বে। আমরা মনে করি ব্র্যান্ডিং এবং প্রচারণার ক্ষেত্রে একধাপ এগিয়ে যেতে পারবো। এই শেয়ার আমাদের কর্মকর্তারা যেমন নিতে পারবেন তেমনি গ্রাহকরাও নিতে পারবে। আমি মনে করি এটা আমাদের বোর্ডের বড় একটা ত্যাগ।

বেশ কিছু বীমা কোম্পানি নিয়ে বাজারে নেতিবাচক সংবাদ রয়েছে। এই নেতিবাচক সংবাদ আপনাদের চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলেছে কিনা।
এস এম নুরুজ্জামান: একটা বা দুটো বীমা কোম্পানির সমস্যা মানে পুরো খাতের সমস্যা। এটা উত্তরণও বেশ চ্যালেঞ্জের। তবে আশার কথা হলো- জেনিথ ইসলামী লাইফের একটা ক্লেইমও পেন্ডিং নাই। আমরা গ্রাহকের সব বিষয়ই দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করি। আমাদের পেমেন্টগুলোও বেশ স্বচ্ছ। আমরা গ্রাহকের টাকা চেকে না দিয়ে বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ডস ট্রান্সফার নেটওয়ার্কের (বিইএফটিএন) মাধ্যমে দিই। এটি অধিকতর নিরাপদ বলে গ্রাহক আস্থা পায়। গ্রাহকের আস্থার কারণেই আমাদের ব্যবসা দিনদিন ডেভেলপ হচ্ছে।

পুঁজিবাজারে আসার প্রথম ধাপ পেরিয়েছেন। কবে নাগাদ পুঁজিবাজারে আসতে পারবেন বলে আশা করছেন।
এস এম নুরুজ্জামান: আলহামুদুলিল্লাহ আমরা একটি ধাপ পার হয়েছি। সাড়ে ৪ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রির পর আমরা পরবর্তী ধাপগুলোর দিকে আগাবো। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কিছু নিয়ম রয়েছে- যেমন স্বাধীন পরিচালক নিয়োগ, ইস্যু ম্যানেজার নিয়োগ। ইতিমধ্যে আমরা তিনজন স্বাধীন পরিচালক নিয়েছি, ইস্যু ম্যানেজারও (প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড) নিয়োগ দিয়েছি। অর্থাৎ আমাদের প্রক্রিয়াগুলো আমরা শুরু করে দিয়েছি। আশা করছি ২০২৩ সালের মাঝামাঝি আমরা পুঁজিবাজারে আসতে পারবো।

বর্তমানে বীমা ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা কী?
এস এম নুরুজ্জামান: বীমা ব্যবসায় বড় প্রতিবন্ধকতা হলো যুগোপযোগী প্রডাক্ট না আসা। এই জায়গাতে সরকারের নজর দিতে হবে। এরপর যথা সময়ে ক্লেইম নিষ্পত্তিটাও বড় চ্যালেঞ্জ। বীমা কোম্পানিগুলো যদি যথা সময়ে ক্লেইম নিষ্পত্তি করতো বিশেষ করে বীমার মেয়াদ শেষ হওয়ার সাথে সাথেই যদি গ্রাহকের টাকা বুঝিয়ে দেয়া হতো তাহলে এই খাতে সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়তো। কোম্পানিগুলো দিচ্ছে না তা নয়, দু’একটি কোম্পানির জন্য পুরো ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.