তালিকাভুক্ত কোম্পানির করপোরেট কর ১৫% করার পরামর্শ মার্চেন্ট ব্যাংকারদের

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার আরও কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন। আজ মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে এক প্রাক বাজেট আলোচনায় অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান এ প্রস্তাব তুলে ধরেন।

এনবিআর সদস্য (শুল্ক নীতি) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে এ আলোচনায় বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) প্রতিনিধিরাও অংশ নেন। এনবিআর সদস্য (ভ্যাট নীতি) জাকিয়া সুলতানা এবং সামসুদ্দিন আহমেদও (আয়কর নীতি) উপস্থিত ছিলেন বেঠকে।

মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, বর্তমানে শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এই কর হারেও অনেক ভারো কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে উৎসাহিত হচ্ছে না। অথচ বাজারে মৌলভিত্তি সম্পন্ন ভালো কোম্পানির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। তাই বাজারে ভালো কোম্পানিকে আগ্রহী করে তুলতে এই কর হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব করছি।

তিনি বলেন, “এখন দেশে এমন অনেক কোম্পানি আছে, যারা ভালো ব্যবসা করেও কম কর দিচ্ছে। কীভাবে কম কর দেওয়া যায় তেমন সুযোগ সুবিধা ভোগ করছে।”

এমন পরিস্থিতিতে করের হার কমিয়ে এসব কোম্পানিকে বাজারে তালিকাভুক্ত করা গেলে সরকারের রাজস্ব আরও বাড়বে বলে মত দেন ছায়েদুর।

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত নয়- এমন কোম্পানিকে এখন ৩০ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হয়, যেখানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির কর হার ২২ দশমিক ৫০ শতাংশ।

মার্চেন্ট ব্যাংকের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কর হার ৩৭ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করারও দাবি জানান ছায়েদুর রহমান। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোকে এখন বৃহৎ কর ইউনিটের আওতায় কর দিতে হয় বলে তিনি হাতাশা প্রকাশ করেন।

তার দাবি, কোভিড মহামারীর কারণে পুঁজিবাজারে ‘ধীর গতি চলায়’ দেশের ৬৬টি মার্চেন্ট ব্যাংকের পরিচালন খরচ টানাই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বহী সদস্য ও এশিয়া ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমাম শাহীন বলেন, ২০১৪ সালের আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের সকল লাইফ ইস্যুরেন্স কোম্পানির পলিসি হোল্ডারদের মুনাফার উপর ৫ শতাংশ ‘গেইন ট্যাক্স’ দিতে হচ্ছে।

এই কর বাতিল করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “মুনাফার ওপর এই কর আরোপের ফলে দেশের সকল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির গ্রাহক ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে ।”

এই কর প্রত্যাহার করা না হলে লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর ব্যবসার পরিধি প্রতিনিয়ত হ্রাস পাবে এবং কোম্পানিগুলোর পক্ষে টিকে থাকা কষ্টসাধ্য হবে বলে তার ভাষ্য।

এ খাতের করপোরেট কর কমানোর দাবি জানিয়ে ইমাম শাহীন বলেন, আয়কর আইন অনুযায়ী তালিকাভুক্ত ব্যাংক, ইস্যুরেন্স এবং অন্যান্য অর্থিক প্রতিষ্ঠানের করহার ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ।

“এই কর হার অনেক বেশি। জীবন বীমার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ এবং জীবন বীমা নয় এমন বীমার ক্ষেত্রে ৩৫ শতাংশ করপোরেট কর ধার্য করা হোক।”

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) সাইফুর রহমান মজুমদার শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর করপোরেট কর হার ১৭ দশমিক ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনার প্রস্তাব দেন।

তিনি বলেন, করের হার কমে গেলে এসব কোম্পানির হিসাবে পুরোপুরি স্বচ্ছতা আসবে। আর স্বচ্ছতা এলে রাজস্ব আহরণ বাড়ার পাশাপাশি শেয়ারধারীরাও লাভবান হবে।

এছাড়া যে কোনো বন্ডকে করের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে জিরোকুপন বন্ডকে করমুক্ত রাখা হলেও অন্যান্য বন্ডকে করের আওতায় রাখা হয়েছে।

“জিরো কুপন বন্ডের কর ছাড় কোন সুবিধার জন্য তা আমরা বুঝি না। আমরা মনে করি সুকুকসহ সকল ধরনের বন্ডকে করের আওতামুক্ত রাখা গেলে দেশে একটা বন্ড মার্কেট তৈরি হতে পারে।”

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) জিএম গোলাম ফারুক আলোচনায় অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ বহাল রাখার দাবি তুলে ধরে বলেন, নির্দিষ্ট হারে কর দিয়ে শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করা অর্থের উৎস সম্পর্কে প্রশ্ন না তোলা হলে বাজারে বিনিয়োগ বাড়বে বলে তিনি মনে করেন।

এছাড়া লভ্যাংশের ওপর উৎসে কর বাতিল, করমুক্ত আয়ের সীমা ১ লাখ টাকায় উন্নীতকরা এবং এসএমই কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে প্রথম তিন বছর কর ছাড় এবং পরে ১৫ শতাংশ কর নেওয়ার প্রস্তাব করেন তিনি।

এনবিআর সদস্য মাসুদ সাদিক বলেন, এসব খাতের সকল প্রস্তাব বিশ্লেষণ করে নতুন বাজেটে কী সুবিধা দেওয়া যায় সে বিষয়ে এনবিআর সিদ্ধান্ত নেবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.