নির্দেশনা না মানায় ৮ কোম্পানির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আট কোম্পানি নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে কোন আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এমন আচরণের কারণে কোম্পানিগুলোকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। একটি অনলাইন পোর্টালকে দেয়া সাক্ষাতকারে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবায়েত উল ইসলাম।

তিনি বলেন, ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া ৩০ কোম্পানির মধ্যে কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে। আর কিছু কোম্পানি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের চেষ্টাও করে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো ৩০ শতাংশ ধারণ করতে পারেনি। তারা ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য কয়েক মাস সময় চাচ্ছে, সময়ের বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি। একটু সময় দিলে কোম্পানিগুলো যদি ৩০ শতাংশ ধারণ করতে পারে, তাহলে অসুবিধা কী। আমরা চাই কোম্পানিগুলো কিছু সময় নিয়েও শেয়ারবাজারের আইন পরিপালন করুক। এতে কোম্পানি, শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারী সবাই উপকৃত হবে।

তিনি বলেন, ‘৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য ৮টি কোম্পানি মোটেও আগাচ্ছে না। এই ৮ কোম্পানিকে আমরা শাস্তির আওতায় আনার পরিকল্পনা করছি।’

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে কোন প্রকার আগ্রহ না দেখানো এই আট কোম্পানির মধ্যে রয়েছে সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস, সিঅ্যান্ডএ টেক্সটাইলস, ফ্যামিলিটেক্স বিডি, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডায়িং, অলিম্পিক এক্সেসরিজ, প্রাইম ইন্স্যুরেন্স ও রতনপুর স্টিল রি-লোরিং মিলস (আরএসআরএম)।

এর আগে গত ৬ ডিসেম্বর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২৫টি কোম্পানিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারনের জন্য সময় বেঁধে দিয়েছিলো। কিন্তু বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে মাত্র একটি কোম্পানি ওষুধ ও রাসায়ন খাতের অ্যাডভেন্ট ফার্মার উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা পরিপালন করেছে।

বাকি ২৪টি কোম্পানির মধ্যে ১১টি কোম্পানি এই নির্দেশনা পরিপালন করার আগ্রহ প্রকাশ করে সময়ে চেয়েছে। ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের নির্দেশনা পরিপালনের জন্য তারা বিভিন্ন মেয়াদে বিএসইসি’র কাছে সময় চেয়ে আবেদন করেছে। আর ৫টি কোম্পানি নির্দেশনা পরিপালন না করার কারণ এবং তাদের পরিকল্পনার কথা বিএসইসিকে জানিয়েছে। এছাড়া বাকি ৮টি কোম্পানি নির্দেশনা পরিপালন না করার কারণ বা সময় চেয়ে মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) পর্যন্ত বিএসইসিতে কোনো আবেদন করেনি।

বিএসইসির মতে, যেসব কোম্পানির সময় চেয়ে আবেদন করেছে তাদেরকে সহায়তা করা হবে। বিশেষ করে কোম্পানিগুলোর অন্যান্য যেসব শেয়ারহোল্ডার রয়েছে, তাদের মধ্যে কেউ আগ্রহী হলে তাকে পরিচালনা পর্ষদে সংযুক্ত করা হবে। সেসব কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চলছে। তবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য কোম্পানিগুলোকে বেশি দামে শেয়ার কিনতে হচ্ছে। ফলে অনেক কোম্পানির ওই দামে শেয়ার কিনতে পারছে না বলে বিএসইসিকে অবহিত করেছে। ফলে কোম্পানিগুলোর আগ্রহ বিবেচনায় তাদেরকে সহায়তা করা হবে। তবে যেসব কোম্পানি ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করার বিষয়ে চেষ্টা করছে না, তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। প্রকৃত কারণ ছাড়া ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থতার জন্য কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ফার্মা এইড, অগ্নি সিস্টেমস, অ্যাক্টিভ ফাইন কেমিক্যালস, আলহাজ্জ টেক্সটাইল মিলস, অ্যাপোলো ইস্পাত কমপ্লেক্স, আজিজ পাইপস, ডেল্টা স্পিনার্স, ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ, ফু-ওয়াং ফুডস, জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন ও সালভো কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ।

আর শেয়ারধারণের পরিকল্পনার কথা জানানো কোম্পানিগুলো হলো- ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফাইন ফুডস, ইনফরমেশন সার্ভিসেস নেটওয়ার্ক, কাট্টলি টেক্সটাইল ও সুহৃদ ইন্ডাস্ট্রিজ। কোম্পানিগুলো তাদের আবেদনে দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনা জানিয়েছে।

তথ্য মতে, ২০১১ সালের ২২ ডিসেম্বর শেয়ারবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে তালিকাভুক্ত কোম্পানির প্রত্যেক পরিচালককে ন্যূনতম ২ শতাংশ ও সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ বাধ্যতামূলক করে নির্দেশনা দেয় তৎকালীন চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম খায়রুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন। সংস্থাটি আইনের ‘২সিসি’ ধারার ক্ষমতাবলে সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের এই নির্দেশনা জারি করে। তবে, শুরুতে এই নির্দেশনাটি নিয়ে কয়েকটি কোম্পানির পরিচালকরা হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করে বিএসইসির নির্দেশনার পক্ষে রায় দেন হাইকোর্ট। এরই ধারাবাহিকতায় বিএসইসি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সব কোম্পানিকে উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের জন্য নির্দেশনা দেয়। তবে, ২০২০ সালের ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিএসইসির বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে এই ২৫টি কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালক সম্মিলিতভাবে পরিশোধিত মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে কোম্পানিগুলোকে আরও এক মাস অর্থাৎ চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছিল বিএসইসি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.