পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করবে আইটি খাত

সাক্ষাৎকার: বিএসইসি চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম

0

স্টকরিপোর্ট ডেস্ক : নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আইটি খাতে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। খবর ভোরের কাগজ।

অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রোড শোর আয়োজন করা হচ্ছে। এতে প্রবাসীসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের ‘ব্র্যান্ডিং ইমেজ’ বদলে যেতে শুরু করেছে। নেতিবাচক ধারণা পাল্টে বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে, যা আমাদের দেশে বিনিয়োগের সড়ককে অনেক প্রশস্ত করছে।

তিনি বলেন, দেশে যত বিনিয়োগ আসবে, পুঁজিবাজার তত লাভবান হবে। আমাদের দরকার পুঁজিবাজারকে উজ্জীবিত করার জন্য আরো বিনিয়োগ আনা।

শিবলী রুবাইয়াত বলেন, নতুন বছরে বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়নে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ ও বাধা রয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী সব সময় আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। যে কারণে বাজারকে এই পর্যায়ে আনা সম্ভব হয়েছে। আমরা পুঁজিবাজারের উন্নয়নে যা করছি, সেসব বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা রয়েছে। এজন্য অনেক কিছু আমরা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছি। পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ভবিষ্যতে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্টোরেল কিংবা টানেলের মতো মেগা প্রকল্প পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে পারে। এতে দীর্ঘমেয়াদি অর্থের বড় উৎস হিসেবে পুঁজিবাজারকে তৈরি করা হবে। নতুন বছরে পুঁজিবাজারকে আইটি খাতে শক্তিশালী অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।

পুঁজিবাজার নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শিল্পায়ন, অবকাঠামোসহ সব উন্নয়নে প্রধান ভূমিকায় থাকবে পুঁজিবাজার। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বন্ড, মিউনিসিপ্যাল বন্ড, ইনফ্রাস্ট্রাকচার বন্ড খুব জনপ্রিয়। অবশ্য এখন গ্রিনবন্ড, ব্র্যান্ডবন্ড এগুলোও চলে এসেছে। ব্যাংকের মূলধন শক্ত করতে রয়েছে পারপেচুয়াল ও সাব-অর্ডিনেটেড বন্ড। এছাড়া ইকুইটির মাধ্যমে কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে সাহায্য করা হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আমরা শুধু ইকুইটি বেস নিয়ে কাজ করেছিলাম। কিন্তু সেখানেও আমরা বড় ধরনের শিল্পায়নে সহায়তা করতে পারিনি। আমরা এখন ইকুইটির মাধ্যমে চেষ্টা করছি ভালো ভালো কোম্পানিকে সহায়তা করার। পাশাপশি ব্যাংকগুলোর মূলধন বিভিন্ন বন্ড দিয়ে শক্তিশালী করা। ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট বিভিন্ন বন্ড নিয়ে আসা। সেই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য ডেরিভেটিভের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের সাহায্য করা। এজন্য আমরা কমিউনিটি এক্সচেঞ্জ ও ডেরিভেটিভ মার্কেটগুলোর হিউম্যান ক্যাপিটাল উন্নয়ন করছি।

নতুন বছরে পুঁজিবাজারে বন্ডের বিকাশ কেমন হবে জানতে চাইলে অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, সম্প্রতি সুকুক বন্ড সফলভাবে চালু হয়েছে। আমরা যোগ দেয়ার পরপরই বলেছিলাম, সুকুক বন্ড চালু করব। সফলভাবে চালু করতে সক্ষমও হয়েছি। ৪ হাজার কোটি সুকুক বন্ডের বিপরীতে ১৫ হাজার কোটি টাকার আবেদন জমা পড়েছে, যা প্রায় ৪ গুণ। বাংলাদেশের সম্পূর্ণ ইনফ্রাস্ট্রাকচার পরিবর্তন করে দেয়া সম্ভব হবে শুধু সুকুক বন্ড দিয়ে। তিনি বলেন, আমাদের ভবিষ্যৎ এত দিন খারাপ ছিল, সুকুক বন্ডই হওয়ার কথা ছিল ডেভেলপমেন্টের টুল। এটা এত দিন ছিল না- এটাই দুঃখজনক। শুধু রাজস্ব আহরণ করে সরকার দেশকে এগিয়ে নিতে পারবে না। এজন্য একসঙ্গে সবাই মিলে কাজ করতে হবে।

মিউচুয়াল ফান্ড নিয়ে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডকে বলা হয় বাজারকে স্থিতিশীল রাখার সবচেয়ে বড় নিয়ামক। ভারতে যেমন মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি মানুষের আগ্রহ রয়েছে, বাংলাদেশেও ঠিক সেভাবেই মিউচুয়াল ফান্ডের প্রতি সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যার ফলে তৈরি হয়েছে গোল্ডেন জুবিলি ফান্ড। এ ফান্ডকে পরিচালনার জন্য এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা কখনই কমবে না। এটা দিনে দিনে বাড়বে। তাই বিনিয়োগকারীদের উচিত এই ফান্ডে বিনিয়োগ করে ভালো রিটার্ন নেয়া। এই ফান্ড থেকে বিনিয়োগকারীরা ডাবল গেইন পাবেন বলে জানান তিনি। এই ফান্ড অনেক ভালো করবে। কারণ এ ফান্ডের পরিচালনায় যারা রয়েছেন, তারা সবাই খুবই দক্ষ ও অভিজ্ঞ।

ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড প্রসঙ্গে বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই অভিযোগ আসে বিনিয়োগকারীরা ডিভিডেন্ড পায় না। তাহলে ডিভিডেন্ড কোথায় যায়, এটা জানতে সব কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়। কোম্পানিগুলো বলে ডিভিডেন্ড নেয়ার জন্য লোক ও সঠিক ঠিকানা পাওয়া যায় না। কিন্তু জানা যায় ডিভিডেন্ডগুলো কোম্পানিগুলোর কাছে রয়ে গেছে। যার পরিমাণ প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা। কোম্পানিগুলোর কাছে পড়ে থাকা এই ডিভিডেন্ডের টাকা দিয়ে আইসিবির কাস্টডি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ফান্ড গঠন করা হয়। যার নাম ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ড। এখন পর্যন্ত এই ফান্ডে ৫০০ কোটি টাকার মতো জমা পড়েছে। এ টাকাটা সরকারের একটি সংস্থার কাছে রেখে যদি ব্যবহার করা যায়, তাহলে পুঁজিবাজারের তারল্য সংকট কিছুটা দূর হবে।

পুঁজিবাজারে উৎপাদন বন্ধ বা দুর্বল কোম্পানিগুলোকে সচল করার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রিং সাইন টেক্সটাইল উৎপাদনে চলে গেছে। সেখানে তিন শিফটে এক-দেড় হাজার শ্রমিক কাজ শুরু করেছেন। এমারেল্ড অয়েলে এক বিদেশি বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে এসেছেন। শিগগিরই কাজ শুরু হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। ফারইস্ট ফাইন্যান্স, ফাস ফাইন্যান্স ও ফারইস্ট স্টকস এন্ড বন্ডসের পর্ষদ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, কিছু জায়গায় কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রি-ব্র্যান্ডিং করতে হবে, সেগুলোও শুরু হচ্ছে। সব মিলিয়ে সেসব দুর্বল কোম্পানিকে আমরা বিভিন্নভাবে সাহায্য করা চেষ্টা করছি, যাতে বিনিয়োগকারীদের কোনো ক্ষতি না হয়। বহুজাতিক ও সরকারি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, কিছু কোম্পানি আসবে। তাদের সঙ্গে আমাদের কথা হচ্ছে। আমরা তাদেরকে বোঝাচ্ছি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.