হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন বড় বিনিয়োগকারীরাও!

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : শেয়ারবাজারের টানা পতনের প্রেক্ষাপটে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে বড় বিনিয়োগকারীরা মার্কেটে মেকারের ভূমিকায় ফেরার প্রতিশ্রতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি থেকে তারা এখন যোজন যোজন দুরে অবস্থান করছেন। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মতো তারাও এখন হাত গুটিয়ে নিচ্ছেন। ফলে বাজার আগের মতো বড় পতনের দিকেই ধাবিত হচ্ছে-এমন মন্তব্য বাজার সংশ্লিষ্টদের।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানা উদ্যোগের পরও যখন বাজার ঘুরতে পারছিল না, তখন বড় বিনিয়োগকারীদের জামাই আদর করে আমন্ত্রণ জানায় বিএসইসি। তারপর তাদের যাদুর স্পর্শে সোমবার ও মঙ্গলবার দুদিন বাজারে উত্থানও দেখা যায়। কিন্তু তারপর বুধবার থেকে বাজারে ফের পতন শুরু হয়। আজ সেই পতন আরও ভারি হয়। যদিও শেষ বেলায় পতনের গভীরতা কিছুটা কমতে দেখা যায়।

সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস আজ বৃহস্পতিবার ৫৭ পয়েন্ট সূচক হারাল প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর ফলে ডিএসইর সূচক চলতি বছরের সর্বনিম্ন তো বটেই, ১৩ মাসের বেশি সময় পর ৬ হাজারের নিচে নেমে গেল।

গতকাল ডিএসইএক্স অবস্থান করছে ৫ হাজার ৯৮০ পয়েন্টে। সূচকের অবস্থান এর চেয়ে কম ছিল গত বছরের ৭ জুন। ওই দিন ডিএসইএক্সের অবস্থান ছিল ৫ হাজার ৯৭৫ পয়েন্টে।

গত সপ্তাহের পুরোটা, তার আগের সপ্তাহের শেষ তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম কর্মদিবসে ধসের মধ্য দিয়ে টানা ৯ কর্মদিবসে সূচক পড়ে যায় ৩১৪ পয়েন্ট।

এর মধ্যে গত সপ্তাহের সোমবার ও মঙ্গলবার এবং চলতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাপক ধস নামে। এই দিনগুলোতে তিনশ’র বেশি কোম্পানির পতন দেখা যায়।

এরপর বড় বিনিয়োগকারীদের বদৌলতে সোমবার ও মঙ্গলবার কিছুটা ভালো দিন গেছে শেয়ারবাজারে। দুই কর্মদিবসে যথাক্রমে ৩০ ও ২৯ পয়েন্ট যোগ হয়েছে সূচকে।

এরফলে পতন থেকে বেরিয়ে উত্থানের যে আশা জেগেছিল বিনিয়োগকারীদের মনে, তা ফের মিলিয়ে যায় গতকালের ধসে। এদিন তিনশ’র বেশি কোম্পানির দরপতন দেখা যায়। আগের দুই কর্মদিবসে যতটুকু পয়েন্ট বেড়েছিল তার চেয়ে আরও ১৪ পয়েন্টের বেশি কমে যায়।

বাজার সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করছেন, বাজারের এই সংকটে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের বিশেষ করে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর ভূমিকা রহস্যময় হয়ে উঠেছে। মার্চেন্ট ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিরা কথামালার ফুলজুড়ি তুলে সব সময়ে লাইমলাইটে থাকার চেষ্টা চালান। কিন্তু সংকটের সময়ে লাপাত্তা। শেয়ারবাজারে মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগ নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলো গনমাধ্যমের সঙ্গে তাদের বিনিয়োগ নিয়ে কথাই বলতে চায় না। এমনকি মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়শেনের কর্তকর্তাও এই বিষয়ে মুখ খুলতে নারাজ।

বাজার সংশ্লিষ্টর বলছেন, মার্চেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব বিনিয়োগ বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর হওয়া উচিত। যাতে যে উদ্দেশ্যে মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো অনুমোদন পেয়েছে, সেই উদ্দেশ্য তারা কতটা প্রতিপালন করছে। বাজার থেকে তারা শুরু মুনাফাই তুলবে, বাজারের প্রতি তাদের কোন দায়বদ্ধতা থাকবে না, এমনটাতো হতে পারে না।

বৃহস্পতিবাররের বাজার চিত্র: গতকাল ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৭৪.২৪ পয়েন্ট বা ৫৭.৪৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার ৯৮০.৫১ পয়েন্টে। ডিএসইর এই সূচকটি এক বছর এক দিন বা ২৬১ কার্যদিবস পর ছয় হাজার পয়েন্টের নিচে বা পাঁচ হাজার পয়েন্টের ঘরে নেমে গেছে।

ডিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ সূচক ১১.৬৪ পয়েন্ট বা ০.৮৮ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৭.৬০ পয়েন্ট বা ০.৮১ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩০৮.২০ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ১৪৫.২৫ পয়েন্টে।

টাকার পরিমাণে ডিএসইতে আজ লেনদেন হয়েছে ৪৪১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার। যা আগের কার্যদিবস হতে ৩৩৬ কোটি ৬৬ টাকা কম। আগের কার্য দিবসে লেনদেন হয়েছিল ৭৭৮ কোটি ৪৩ লাখ টাকা।

ডিএসইতে আজ ৩৮০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৫টির বা ৫.৫৮ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ৩৩৩টির বা ৮৭.৬৩ শতাংশের এবং ২২টির বা ৫.৭৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

দেশের দ্বিতীয় শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ২০৪.০৪ পয়েন্ট বা ১.১৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৫৯৭.৫৬ পয়েন্টে।

এদিন সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৭১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার দর বেড়েছে ১৭টির কমেছে ২৪০টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১৪টির দর। আজ সিএসইতে ১১ কোটি ১১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.