অবস্থার উন্নয়নে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার প্রস্তাব

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) ভাইস চেয়ারম্যান সাদিক আহমেদ বলেছেন, বেসরকারি খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলোকে তাদের অবস্থার উন্নতি ঘটানোর জন্য সময় বেঁধে দিতে হবে। নইলে সেগুলোকে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করে দেওয়া যেতে পারে। আর সরকারি ব্যাংকগুলো পরিচালনায় স্বাধীন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিতে হবে। যেখানে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম) আয়োজিত ২০তম নুরুল মতিন মেমোরিয়াল ‘এথিকস ইন ব্যাংকিং’ বা ‘ব্যাংকসেবায় নৈতিকতা’ শীর্ষক বক্তৃতায় গত সোমবার তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিআইবিএমের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিআইবিএমের মহাপরিচালক মো. আখতারুজ্জামান।

সাদিক আহমেদ বলেন, সরকারি খাতে কেবল একটি ব্যাংক রেখে বাকিগুলো বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যেতে পারে। আবার একটি রেখে অন্য সরকারি ব্যাংকগুলোকে ন্যারো ব্যাংকেও পরিণত করা যেতে পারে। এসব ব্যাংক আমানত নিলেও শুধু ট্রেজারি বিলে তা বিনিয়োগ করতে পারবে। কোনো ঋণ দিতে পারবে না। তবে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর কোনোটাই সম্ভব না। এ জন্য সরকারি ব্যাংকে তদারকির পুরো দায়িত্ব কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।

সাদিক আহমেদ বলেন, ব্যাংকিং কার্যক্রমে নৈতিকতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো ব্যাংকিং গভর্ন্যান্স। ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া সংস্কার কর্মসূচির আগে, ব্যাংক খাতে প্রশাসন খুবই দুর্বল ছিল। এখন ব্যাংকিং নৈতিকতা আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে। ১৯৯৮-পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং খাতের সংস্কারগুলো মূলত এই খাত সুশাসন ও নৈতিকতার পুনরুদ্ধার করেছিল। এ সময় ব্যাংকিং খাতের উন্নয়নে বিভিন্ন আইন-কানুন ও নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এর মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতের সামগ্রিক অবস্থার যথেষ্ট উন্নতি হয়েছে।

সাদিক আহমেদ বলেন, কাগজে-কলমে খেলাপি ঋণ কমানো বা শক্তিশালী ঋণখেলাপিদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতাকে শক্তিশালী করা উচিত, যাতে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে কোনো ভয় বা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে না পড়তে হয়। এখন সময় এসেছে বাস্তবে ব্যাংকগুলোর সমস্যার সমাধান করা, যেখানে অর্থ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সহায়তা করতে পারে।

সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ব্যাংকিংয়ে নৈতিকতার চর্চায় পরিচালনা পর্ষদ ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) ভূমিকা পুরো ব্যাংকের অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে সেটাকে আদর্শ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। আন্তর্জাতিক মানের চর্চাগুলোর আলোকে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কর্তব্য আলাদা করে দেওয়া হয়েছে, যাতে ব্যাংক খাতে করপোরেট সুশাসনের চর্চা করা সম্ভব হয়।

উল্লেখ্য, এ এফ এম নুরুল মতিন ১৯৫১ সালে তদানীন্তন স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের গবেষণা বিভাগে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হিসেবে যোগ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২ এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনালাইজেশন অর্ডার ১৯৭২ প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পরে তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ছিলেন। ব্যাংক খাতে তাঁর অসামান্য অবদান স্মরণ রাখতে ১৯৯৮ সাল থেকে প্রতিবছর ‘ব্যাংকিং খাতে নৈতিকতা’ শীর্ষক লেকচার তথা স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করে আসছে বিআইবিএম।

Leave A Reply

Your email address will not be published.