গোপনে ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল বিক্রির ব্যাখ্যা তলব বিএসইসির

0

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওভার দ্যা কাউন্টার (ওটিসি) মার্কেটের কোম্পানি ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালের কারখানার কোন অবকাঠামো নেই। এমনকি কোম্পানিটির কোন সাইনবোর্ডও নেই।

গত ১৫ বছর যাবত কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হয় না। এমনকি শেয়ারহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে একটি ব্যাংকের মাধ্যমে কোম্পানিটি বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

সম্প্রতি ডিএসইর প্রতিনিধি দল কোম্পানির অফিস ও কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে এমন তথ্য পেয়েছে। ডিএসই কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটি অ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে তাদের লিখিত প্রতিবেদন জানিয়েছে।

ডিএসই কর্তৃপক্ষের লিখিত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালের পরিচালনা পর্ষদ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে প্রয়োজনীয় নথিপত্রসহ ব্যাখ্যা তলব করেছে বিএসইসি। একইসঙ্গে বিষয়টি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে অবহিত করা হয়েছে।

ডিএসই ও সিএসইকে কোম্পানির সকল প্রাসঙ্গিক প্রতিবেদন জমা আছে কি-না এবং সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কি-না, তা জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

বিএসইসি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ডিএসইর পরিদর্শন প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে ১ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার টাকা শেয়ারবাজার থেকে সংগ্রহ করেছে।

চিঠিতে বলা হয়, কোম্পানিটি ২০০৭ সালের ৪ এপ্রিল সর্বশেষ এজিএম করেছে। এই কোম্পানির কারখানার সামনে সাইনবোর্ড পাওয়া যায়নি। এমনকি কারখানা প্রাঙ্গণে, ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালের কোনো ভবন বা কারখানার অবকাঠামো ছিল না। এছাড়া ডিএসই পরিদর্শন দল তথ্য সংগ্রহ করে জানতে পারে যে, কোম্পানিটি মেডি প্লাস টুথ পেস্টের নিলামে একটি ব্যাংক মাধ্যমে বিক্রি করা হয়েছে।

ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালের ২০০৫-০৬ হিসাব বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানির অগ্রণী ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিল। কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ৭টি সার্টিফিকেট মামলা রয়েছে এবং বিএসইসি কোম্পানি বিভিন্ন আইন লঙ্ঘনের কারণে মোট ৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে।

চিঠিতে আরো উল্লেখ করা হয়, এসব বিষয়ের ভিত্তিতে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯ এর ধারা ১১(২) এর অধীনে নিম্নলিখিত নথি এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক কাগজপত্রসহ আপনাদের অবস্থান ব্যাখ্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে এই নির্দেশনা ব্যর্থতার জন্য কমিশন আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিএসইসি ওটিসি মার্কেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে ওটিসি মার্কেটের আওতাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা ও ভবিষ্যত সম্ভাবনার ভিত্তিতে এসএমই প্ল্যাটফর্ম ও অল্টারনেটিভ ট্রেডিং বোর্ডে (এটিবি) স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।

এরই ধারাবাহিকতায় ওটিসি মার্কেট থেকে ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনালকে এটিবিতে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি। স্থানান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্নের আগে আর্থিক সক্ষমতা যাচাই করতে কোম্পানির অফিস ও কারখানা পরিদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। আর এই পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিএসইকে। ফলে ডিএসই কোম্পানিটির অফিস ও কারখানা পরিদর্শন করেছে।

ফার্মাকো ইন্টারন্যাশনাল শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় ২০০১ সালে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে কোম্পানির মোট শেয়ার সংখ্যা ৫০ লাখ। এর মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে ৫০ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ৫০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.