তিন ধাপে প্রত্যাহার হবে ফ্লোর প্রাইস

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হচ্ছে শেয়ারবাজারে। অংশীজনদের একটি বড় অংশের চাওয়া—নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেওয়া শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার। দেড় বছর পর সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিএসইসি।

তবে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার নিয়ে এখনো শেয়ারবাজারসংশ্লিষ্টদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করা না পর্যন্ত শেয়ারবাজার স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে না বলে মনে করে একটি পক্ষ।

তবে আরেকটি পক্ষের মত, আরও কয়েক শ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করলে ভালো হয়। অন্যথায় স্বার্থান্বেষী মহল ফ্লোর প্রত্যাহারের সুবিধা লুফে নিবে।

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লোর প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান নিয়ে থাকা বড় বিনিয়োগকারীরা যাতে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ দিয়ে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি না করতে পারে, সে জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে।

চলতি মাসেই তিন ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবছে বিএসইসি। বর্তমানে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে রয়েছে এবং মার্জিন ঋণসুবিধা পায় না, প্রথম ধাপে ওই কোম্পানির সীমা তুলে দেওয়া হবে।

দ্বিতীয়ত, যেসব কোম্পানি ফ্লোরে আছে; কিন্তু তাদের শেয়ারের দাম ওঠানামায় মূল্যসূচকে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না, তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সর্বশেষ ধাপে যেসব কোম্পানি সূচকে প্রভাব রাখে, এই ধরনের বড় মূলধনের কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে।

তবে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বেশির ভাগই এখনই ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পক্ষে নন। তারা বলছেন, বাজার আরও কিছুটা ভালো হোক। সূচক অন্তত আরও ২০০-৩০০ পয়েন্ট বাড়ুক। তখন ফ্লোর প্রাইস তুলে নিলে বাজারে খুব একট চাপ পড়বে না।

তাদের মতে, লেনদেন দেখে মনে হচ্ছে বড় বিনিয়োগকারীরা বাজারে সক্রিয় হতে শুরু করেছেন। তারা আরও কিছু সক্রিয় হলে ফ্লোর প্রাইস পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার পক্ষে তারা। অন্যথায় স্বার্থান্বেষী মহল ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করবে।

শেয়ার কারসাজির ঘটনায় হিরু ও তার সহযোগীদের সতর্ক করেছে বিএসইসি

তবে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অবশ্য বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেওয়ার পর কেউ পরিকল্পিতভাবে ফেলে দিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে পরের দিনই আবার ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হবে। এরপর কারা অযৌক্তিকভাবে বিক্রির আদেশ দিল, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম, লেনদেন করতে দিতে হবে। আমাদের একটাই কথা—বাজারকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হোক। ফ্লোর প্রত্যাহারের সুযোগ নিয়ে যদি কেউ অনৈতিকভাবে ক্ষতির চেষ্টা করে, সেটার জন্য তো এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছেই। যখন যা দরকার, তাঁরা তা করবে।’

এদিকে, বিভক্তি এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে বৃহৎ স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছেন শেয়ারবাজার বিশ্লেষকরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং শেয়ারবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার হলেই ক্রেতা আসবে বা পতন হবে—এই দুই ধারণাই পুরোপুরি ঠিক নয়। ফ্লোর প্রত্যাহার হলে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ দিয়ে যাতে বাজারে আস্থাহীনতা তৈরি না করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.