ফ্লোর প্রাইসের কারণে মুনাফায় ভাটা

0

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : দেশের প্রধান দুই পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) যথাক্রমে মুনাফা কমেছে ৩৫ ও ১২ শতাংশ। লেনদেনের ওপর কমিশন বাধাগ্রস্থ হওয়ায় দেশের দুই পুঁজিবাজারেই চলতি বছরে মুনাফায় ও তার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আর এর নেপথ্যে দায়ী ফ্লোর প্রাইস।

উল্লেখ্য, গত বছরের শুরুতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু পর দেশের পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়। বিনিয়োগকারীদের পুঁজির সুরক্ষার অজুহাতে গত বছরের ২৮ জুলাই সব ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে দেয় বিএসইসি।সেই থেকে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার এখন ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। এই দরে হাজার হাজার বিক্রেতা থাকলেও ক্রেতা নেই। ফলে এসব শেয়ার বিক্রি করে নতুন করে শেয়ার কিনতে পারছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে স্বাভাবিকভাবেই লেনদেন তলানিতে ঠেকেছে।

মূলত স্টক এক্সচেঞ্জের আয়ের প্রধান উৎস লেনদেনের ওপর ধার্য করা কমিশন ফি। বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউসগুলোর প্রতি ১০০ টাকার বিপরীতে ২ দশমিক ৩০ পয়সা করে লেনদেনের কমিশন নেয় স্টক এক্সচেঞ্জ। ডিএসইর লেনদেন আগে দেড়-দুই হাজার কোটি টাকার ঘরে ওঠানামা করলেও এক বছরের বেশি সময় ধরে তা নেমে আসে তিন থেকে পাঁচশ কোটি টাকার ঘরে। এ কারণে এক্সচেঞ্জটির লেনদেনের ওপর কমিশন ফি বাবদ আয়ও কমেছে। তথ্য অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ডিএসইর কমিশন আয় ৫০ শতাংশ কমে হয়েছে ৭৮ কোটি টাকা, যা ডিএসইর মোট আয়ের ৩৯ শতাংশ। যদিও আলোচ্য হিসাব বছরে এক্সচেঞ্জটির স্থায়ী আমানত বা এফডিআরসহ অন্যান্য আয় বেড়েছে। তা সত্বেও কমিশন আয় কমায় মুনাফা কমে গিয়েছে। ডিএসই সাধারণ এর বাইরে লভ্যাংশ, তালিকাভুক্তি ফি, স্পেস ভাড়া এবং লাইসেন্স ও অন্যান্য ফি থেকে আয় করে থাকে।

জানা যায়, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ হিসাব বছরে ডিএসইর আয় নেমেছে ২৩৮ কোটি ১৭ লাখ টাকায়, যা আগের বছরে ছিল ৩২১ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এক বছরের ব্যবধানে আয় কমেছে ৮৩ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ২৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। তার আগের বছরেও আলোচ্য বছরের তুলনায় আয় বেশি ছিল। ২০২০-২১ হিসাব বছরে ডিএসইর আয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। অর্থাৎ এক্সচেঞ্জটিতে গত তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন আয় হয়েছে সর্বশেষ সমাপ্ত হিসাব বছরে। আর ২০২২-২৩ হিসাব বছরে এক্সচেঞ্জটির কর-পরবর্তী মুনাফা নেমেছে ৮০ কোটি ৬৩ লাখ টাকায়। আগের হিসাব ছরে যা হয়েছিল ১২৪ কোটি ৭০ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে মুনাফা কমেছে ৪৪ কোটি ৭ লাখ টাকা বা ৩৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ।

এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ড. এ টি এম তারিকুজ্জামান বলেন, গত বছরে শেয়ার লেনদেন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। যার কারণে ডিএসইর আয় কমেছে। অন্যদিকে আয় কমলেও বিভিন্ন ধরনের ব্যয় বেড়েছে। ফলে আয়ের সঙ্গে মুনাফাও কমেছে।

মুনাফা কমে যাওয়ায় সর্বশেষ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ডিভিডেন্ডও কমিয়েছে ডিএসই। এ বছরের জন্য ৪ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড সুপারিশ করা হয়েছে। বিপরীতে গত হিসাববছরে বিনিয়োগকারীরা ৬ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড পেয়েছিলেন।

অন্যদিকে সিএসই নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে স্টক এক্সচেঞ্জটিতে দৈনিক গড় লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫০ কোটি টাকার বেশি। সর্বশেষ গত জুনে শেষ হওয়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ লেনদেনের পরিমাণ কমে নেমে এসেছে ২৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে সিএসইতে দৈনিক গড় লেনদেন কমে অর্ধেক হয়ে গেছে। এ কারণে লেনদেন বাবদ আয়ও অর্ধেক কমে গেছে স্টক এক্সচেঞ্জটির। ২০২১-২২ অর্থবছরে লেনদেনের কমিশন বাবদ স্টক এক্সচেঞ্জটির আয় ছিল ৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২২-২৩ অর্থবছরে তা কমে সাড়ে চার কোটি টাকায় নেমেছে।

তবে মুনাফা কমলেও লভ্যাংশে কোনো পরিবর্তন হয়নি চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের। গত জুনে সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য সিএসই ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেছে। এর আগের অর্থবছরেও প্রতিষ্ঠানটি তার বিনিয়োগকারীদের ৫ শতাংশ করে ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। বর্তমানে স্টক এক্সচেঞ্জটির যে শেয়ার রয়েছে তাতে ৫ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড দিতে খরচ হয় প্রায় ৩২ কোটি টাকা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.