মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ সম্পর্কে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করল ডিএসই

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : টানা চার সপ্তাহ পতনের পর গেলো সপ্তাহে দেশের শেয়ারবাজারে মূল্যসূচকের কিছুটা ঊর্ধ্বমুখিতার দেখা মিলেছে। পতন কাটিয়ে ঊর্ধ্বমুখিতায় ফেরার এই সপ্তাহে শেয়ারের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে দাপট দেখিয়েছে মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ।

একশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের কাছে গেলো সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার বিনিয়োগের ক্ষেত্রে পছন্দের শীর্ষে ছিল। এতে সপ্তাহজুড়েই শেয়ারের দাম বেড়েছে। ফলে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দাম বাড়ার শীর্ষ স্থানটি দখল করেছে এই কোম্পানিটির শেয়ার।

শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের নিয়মিত লভ্যাংশ দিচ্ছে না। এমনকি নিয়মিত আর্থিক প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে না। তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোকে প্রতি তিন মাস অন্তর আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করার নিয়ম থাকলে, এই কোম্পানিটি ২০২১ সালের পর কোনো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি।

এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ার দাম গেলো সপ্তাহের পাঁচ দিনই বেড়েছে ৪২ দশমিক ৮১ শতাংশ। টাকার অঙ্কে প্রতিটি শেয়ারের দাম বেড়েছে ১২ টাকা ৮০ পয়সা। এতে এক সপ্তাহে কোম্পানিটির শেয়ার দাম সম্মেলিতভাবে বেড়েছে ৪৫ কোটি ৭ লাখ ৯১ হাজার টাকা। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস শেষে কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ টাকা ৭০ পয়সা, যা আগের সপ্তাহের শেষে ছিল ২৯ টাকা ৯০ পয়সা।

শেয়ার দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ কোম্পানিাটির শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছেন। ফলে গত সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৩৬ কোটি ৮০ লাখ ৯০ হাজার টাকা। আর প্রতি কার্যদিবসে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৭ কোটি ৩৬ লাখ ২০ হাজার টাকা।

হঠাৎ শেয়ারের এমন দাম বাড়া কোম্পানিটি ২০০০ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে। এরপর কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের আর কোনো লভ্যাংশ দেয়নি।

২০২০ সালের আগে ২০১৯ সালে ৪ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি। এছাড়া ২০১৮ সালে ৮ শতাংশ, ২০১৭ সালে ৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালে ৮ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ দেয় কোম্পানিটি।

সর্বশেষ প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ মালের মার্চ পর্যন্ত ৯ মাসের ব্যবসায় কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ১ টাকা ২১ পয়সা। তার আগে ২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত বছরের ব্যবসায় শেয়ারপ্রতি লোকসান হয় ৩ টাকা ৬২ পয়সা।

এ ধরনের একটি কোম্পানির শেয়ারের এমন দাম বাড়াকে অস্বাভাবিক বলছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। এজন্য বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে বার্তাও প্রকাশ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ থেকে জানানো হয়েছে, মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের শেয়ারের অস্বাভাবিক দাম বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানিটিকে নোটিশ পাঠানো হয়।

নোটিশের জবাবে কোম্পানিটি জানিয়েছে- সম্প্রতি শেয়ারের যে অস্বাভাবিক দাম বেড়েছে এবং লেনদেন বেড়েছে, এর পিছনে কোনো অপ্রকাশিত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই। গত ১৫ মে এই তথ্য প্রকাশ করে ডিএসই। সে সময় প্রতিটি শেয়ারের দাম ছিল ৩১ টাকা ২০ পয়সা। এরপর শেয়ার দাম কিছুটা কমলেও, এখন আবার হু হু করে বাড়ছে।

৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের এই কোম্পানিটির শেয়ার সংখ্যা ৩ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার ৫৭টি। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ শেয়ার আছে উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ৭০ শতাংশই আছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে। প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ এই প্রতিষ্ঠানটিতে নেই।

মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজের পর গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের পছন্দের তালিকায় ছিল এরামিট সিমেন্ট। সপ্তাহজুড়ে কোম্পানিটির শেয়ার দাম বেড়েছে ২৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ। ১৫ দশমিক ৩৫ শতাংশ দাম বাড়ার মাধ্যমে পরের স্থানে রয়েছে এসকে ট্রিমস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ।

এছাড়া গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহের শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় থাকা- এমারেল্ড অয়েলের ১১ দশমিক ৭৯ শতাংশ, রূপালী ব্যাংকের ১০ দশমিক ৯৫ শতাংশ, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ৮২ শতাংশ, ইয়াকিন পলিমারের ১০ দশমিক ৬১ শতাংশ, চাটার্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ, ফু-ওয়াং ফুডের ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ এবং বেঙ্গল বেঙ্গল উইন্ডসর থার্মোপ্লাস্টিকের ৮ দশমিক ৯০ শতাংশ দাম বেড়েছে।

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.