যে কারণে স্থগিত হলো রিং শাইনের এজিএম

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক : মালিকানা পরিবর্তন, নতুন পরিচালনা বোর্ড গঠনসহ বেশ কয়েকটি জটিলতায় পড়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইল লিমিটেড। এসব কারণে প্রয়োজনীয় উৎপাদনে যেতে পারছে না কোম্পানি। ব্যবসায়িক দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে রিং শাইন টেক্সটাইল। এ পরিস্থিতিতে বার বার তারিখ ঘোষণার পরও কোম্পানিটি বার্ষিক সাধারণ সভাও (এজিএম) করতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে।

গত ২০ জানুয়ারি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি রিং সাইন টেক্সটাইলের এজিএমের তারিখ নির্ধারিত ছিল। পরে তা ৬ মার্চ পুনঃনির্ধারণ করা হয়। কিন্তু কোম্পানিটি রোববার স্টক এক্সচেঞ্জকে ‘অনিবার্য পরিস্থিতি’ উল্লেখ করে ৬ তারিখের এজিএম-ও স্থগিত করেছে।

এজিএম স্থগিত করার কারণ ব্যাখ্যা করে কোম্পানিটির সেক্রেটারি অনিরুদ্ধ পাল সংবাদ মাধ্যমকে কে বলেছেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদ সম্প্রতি নিয়োগ করা হয়েছে এবং বর্তমানে এজিএমের কার্যকারিতা নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলি পুনর্বিন্যাস করার জন্য কোম্পানিটির কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তাই তাদের আরও একটু সময় বেশি প্রয়োজন।

এর আগে গত ১৮ জানুয়ারি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তিন বছরের মেয়াদের জন্য কোম্পানিতে পাঁচজন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করেছে।

এদিকে, হাইকোর্ট পরিচালনা পর্ষদ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করে নতুন বোর্ড কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর রুল জারি করেছেন। উপরন্তু আদালত বিদ্যমান স্পন্সর এবং পরিচালকদের সমন্বয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ অব্যাহত রাখার অনুমতি দিয়েছেন।

তারও আগে গত বছরের আগস্টে বিএসইসি শর্তসাপেক্ষে ওয়াইজ স্টার টেক্সটাইল লিমিটেড এবং পাঁচটি সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক কোম্পানিকে রিং শাইন-এর শেয়ার কেনার অনুমতি দিয়েছিল। যার মধ্যে স্পন্সর-পরিচালকদের শেয়ারও ছিল। কিন্তু বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ওইসব প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কেনার অনুমতি দেওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

মালিকানা হস্তান্তরের জটিলতা : বিএসইসি অনুমোদনের পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও রিং শাইন-এর মালিকানা হস্তান্তর করা সম্ভব হয়নি। এই বিষয়ে কোম্পানিটির এক কর্মকর্তা বলেন, শেয়ার বিক্রয় ও ক্রয় চুক্তি (এসপিএ) বাস্তবায়ন না করার কারণে নতুন মালিকদের কাছে শেয়ার হস্তান্তর করা যায়নি।

প্রস্তাবিত শেয়ারের মধ্যে ওয়াইজ স্টার কিনবে ২ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৩৬ শতাংশ শেয়ার অন্য পাঁচটি কোম্পানি কিনবে।

কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বেপজার দায় রয়েছে প্রায় ১০০ কোটি টাকা এবং কাস্টমস, ভ্যাট এবং অন্যান্য দায় রয়েছে ৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন মালিকরা এই সমস্যাগুলোর সমাধান করতে আগ্রহী নন।

এছাড়া, বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ঋণদাতাদের কাছে তাদের ব্যক্তিগত এবং কর্পোরেট গ্যারান্টি প্রদান করেছেন। যা শেয়ার হস্তান্তরের সঙ্গে এসব গ্যারান্টিও হস্তান্তর হওয়ার কথা। কিন্তু নতুন মালিকরা এসব গ্যারান্টির দায়ভার নিতে রাজি নন। মালিকানা হস্তান্তরের পরে যদি কোম্পানিটি ভেঙে পড়ে, তাহলে ব্যাঙ্কের সমস্ত দায়ভার তাদের উপরই পড়বে যারা ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি প্রদান করেছিল। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমান মালিকরা তাদের শেয়ার নতুন মালিকদের কাছে হস্তান্তর করতে রাজি হননি।

আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২৩ অর্থবছরে রিং শাইনের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৫৩ পয়সা। কোম্পানিটি ২০২৩ অর্থবছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি। তালিকাভুক্তির বছরে অর্থাৎ ২০১৯ সালে কোম্পানিটি ১৫ শতাংশ বোনাস ডিভিডেন্ড দিয়েছিল। এরপর আর কোনো ডিভিডেন্ড দেয়নি।

এর আগে, কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুং ওয়েন লি অ্যাঞ্জেলা বলেছিলেন, কোম্পনিটির উৎপাদনশীলতা ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে। আগের ৭৮ শতাংশ থেকে বর্তমানে ক্ষমতা ব্যবহার ৪০ শতাংশে পৌঁছেছে।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে রিং শাইন টেক্সটাইল ফিক্সড প্রাইসে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা সংগ্রহ করেছিল। তালিকাভুক্তির সময়ে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের ভালো রিটার্ন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বড় অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ করেছিল। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর বিভিন্ন সমস্যার কারণে কোম্পানিটি সঠিকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারেনি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.