বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চায় অস্ট্রেলিয়া

0

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে চায় অস্ট্রেলিয়া। উভয় দেশই ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফ্রেমওয়ার্ক অ্যারেঞ্জমেন্ট (টিফা)-এর অধীনে এই ধরনের বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে অস্ট্রেলিয়ার কাছ থেকে আরও কিছু খাতে বিনিয়োগ চাইছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে কৃষি, জ্বালানি, আইসিটি ও শিক্ষা খাত অগ্রাধিকার পাচ্ছে। টিফার অধীনে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আজ মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার রাজধানী ক্যানবেরায় যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ অন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগের (টিফা) প্রথম বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। সভায় বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট সেক্রেটারি টিন ইয়েন্ড।

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ক্যানবেরা থেকে ফোনে বলেন, আমরা চাই অস্ট্রেলিয়া কৃষি, জ্বালানি, আইসিটি এবং শিক্ষায় বিনিয়োগ করুক। বিশেষ করে বাংলাদেশে শিক্ষার পাশাপাশি বৃত্তিমূলক দক্ষতা উন্নয়নে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চাওয়া হবে। আমাদের দেশে অনেক অদক্ষ মানুষ আছে। এগুলোকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে পারলে করোনা পরবর্তী বিশ্বে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে অস্ট্রেলিয়ার আগ্রহ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব বলেন, আমরা যেমন অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিনিয়োগ চাইছি, তেমনি তারাও আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটি পোর্টফোলিও বিনিয়োগ হবে। এখন তারা কী ধরনের পোর্টফোলিও বিনিয়োগ করতে চায় সে সম্পর্কে জেডাব্লিওজি-এর সভায় জানতে পারব আমরা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে টিফা চুক্তি স্বাক্ষরের পর এটিই দুই দেশের মধ্যে প্রথম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক। স্বাভাবিকভাবেই এই বৈঠকে করোনার পর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের বিষয়টি জোরদার হচ্ছে। তাই উভয় দেশই নিজ নিজ দেশ থেকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্প্রসারণের কৌশল উপস্থাপন করবে।

অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্তৃক প্রণীত ‘বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট স্ট্র্যাটেজি পেপার’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে- দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলারের কাছাকাছি হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অস্ট্রেলীয় বিনিয়োগের পরিমাণ সন্তোষজনক নয়। সে কারণে অস্ট্রেলীয় উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করতে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার।

বাংলাদেশ হাইকমিশনের কৌশলপত্রে দেখা গেছে, ২০১৯ সালে অস্ট্রেলিয়ার ব্যবসায়ীরা ভারতে ১ হাজার ৪৭৩ কোটি ডলার, ফিলিপাইনে ৭৫৫ কোটি ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ৭৯২ কোটি ডলার, থাইল্যান্ডে ৫৩০ কোটি ডলার এবং ভিয়েতনামে ২৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করলেও বাংলাদেশে আলোচ্য সময়ে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগের পরিমাণ মাত্র ৩২ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক নিয়ে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যে ‘ইনপুট’ পাঠিয়েছে সেখানে ছয়টি ইস্যু তুলে ধরা হয়েছে। এফবিসিসিআই বলেছে, বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য সুবিধা দিচ্ছে।

তবে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর দেশটিতে আর এ বাণিজ্য সুবিধা পাওয়া যাবে না। উত্তরণ-পরবর্তী বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখতে অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ)-এর প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। বাংলাদেশের এক শ অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিষয়টি অস্ট্রেলিয়ার সামনে তুলে ধরে এসব অঞ্চলে দেশটির উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আহ্বান করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে এফবিসিসিআই।

প্রতিষ্ঠানটি তাদের পাঠানো ইনপুটে বাংলাদেশের শিক্ষা খাতেও অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। ফল আমদানিতে ট্যাক্স কমানো এবং তুলা আমদানি সহজ করার বিষয়েও অস্ট্রেলীয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে বলা হয়েছে ওই ইনপুটে। এছাড়া ব্লু-ইকোনমি, বিশেষ করে গভীর সমুদ্র থেকে তেল, গ্যাস উত্তোলনে অস্ট্রেলিয়ার সহায়তা চাইতে বলেছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনটি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.