শেয়ারবাজারে আসছে শর্টসেল

0

 

স্টকরিপোর্ট প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারে আসছে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফ নামে পরিচিত নতুন পণ্য। এরই মধ্যে ১০০ কোটি টাকার একটি ইটিএফ বা তহবিলের নিবন্ধন দিয়েছে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফ নামে নিবন্ধিত এ তহবিল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বাজারে আনতে যাচ্ছে লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি। গত মঙ্গলবার এ তহবিলের নিবন্ধন দেয় বিএসইসি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এটি বাজারে তালিকাভুক্ত হলে এ তহবিলের হাত ধরেই বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘শর্টসেল’কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। শর্টসেল হচ্ছে এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে শেয়ার বা তহবিলের ইউনিটের দাম নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ পদ্ধতির আওতায় হাতে শেয়ার বা ইউনিট না থাকার পরও বাজারে বিক্রয়াদেশ দেওয়া যায়। তবে সেটি করতে পারবে অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান।

বিএসইসির নিবন্ধিত নতুন এলবি মাল্টি অ্যাসেট ইনকাম ইটিএফের মাধ্যমে শর্টসেলের সুযোগ পেতে যাচ্ছে বেশ কয়েকটি ব্রোকারেজ হাউস। তহবিলটি বাজারে তালিকাভুক্তির পর বাজারমূল্য যদি নির্ধারিত সীমার বেশি ওপরে উঠে যায়, তাহলে বাজারে শর্টসেলের মাধ্যমে বিক্রয়াদেশ বাড়িয়ে এটির দাম নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ জন্য তহবিলটির অনুমোদিত বা অথরাইজড অংশগ্রহণকারী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে তিনটি ব্রোকারেজ হাউস। সেগুলো হলো লঙ্কাবাংলা সিকিউরিটিজ, গ্রিনডেল্টা সিকিউরিটিজ ও ইউনাইটেড ফাইন্যান্সিয়াল ট্রেডিং কোম্পানি।

কীভাবে কাজ করবে শর্টসেল

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, নিবন্ধিত ইটিএফটির লেনদেন শুরু হয়েছে শেয়ারবাজারে। এটির প্রকৃত সম্পদমূল্য বা এনএভি ১০ টাকা। সেই হিসাবে এটির ইউনিটের দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১ টাকা বাড়তে পারবে। একইভাবে দাম সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ বা ১ টাকা কমতেও পারবে। এখন ধরা যাক, লেনদেনের শুরুতেই এর প্রতিটি ইউনিটের দাম ১০ শতাংশ বেড়ে ১১ টাকা হয়ে গেছে।

তাহলে তহবিলটির অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের হাতে তহবিলটির ইউনিট না থাকার পরও বাজারে এ ইউনিট বিক্রি করতে পারবে শর্টসেলের আওতায়। দিন শেষে শর্টসেলের মাধ্যমে এসব ব্রোকারেজ যত ইউনিট বিক্রি করবে, লেনদেন শেষে তার সমপরিমাণ নতুন ইউনিট ইস্যু করবে সম্পদ ব্যবস্থাপক।

ইটিএফের ক্ষেত্রে শর্টসেলের এই ব্যবস্থাকে ইউনিট ক্রিয়েশনও বা নতুন ইউনিট সৃষ্টি হিসেবে অভিহিত করা হয়। কারণ, তাৎক্ষণিক শর্টসেলের বিপরীতে নতুন ইউনিট ইস্যু করবে সম্পদ ব্যবস্থাপক।

একইভাবে তহবিলটির ইউনিটের বাজারমূল্য যখন ১০ শতাংশ বা তার কাছাকাছি কমবে, তখন অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসগুলো বাজার থেকে ইউনিট কিনে দাম ধরে রাখতে ভূমিকা পালন করবে। দিন শেষে অনুমোদিত ব্রোকারেজ হাউসগুলো তাদের কেনা ইউনিট এনএভিতে সম্পদ ব্যবস্থাপকের কাছে হস্তান্তর করবে।

ইটিএফের ক্ষেত্রে এ ব্যবস্থাকে বলা হয় রিডেমপশন বা অবলুপ্তি। এভাবে নতুন ইউনিট সৃষ্টি ও অবলুপ্তির মাধ্যমে তহবিলের বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ইউনিট সৃষ্টি ও অবলুপ্তি ব্যবস্থার মাধ্যমে বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণের সুবিধা থাকায় এ ধরনের তহবিলে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের ঝুঁকি কম থাকে। একইভাবে এতে অস্বাভাবিক মুনাফার সম্ভাবনাও কম।

কারণ, ইটিএফের বাজারমূল্য ওই তহবিলের এনএভির কাছাকাছিই থাকবে। তাই বাজারে এ ধরনের তহবিল যত বাড়বে, ততই বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আগ্রহী হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শর্টসেল ব্যবস্থাটি প্রচলিত থাকলেও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এখন পর্যন্ত শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে শর্টসেলের আনুষ্ঠানিক প্রয়োগ নেই। শুধু ইটিএফের ক্ষেত্রে এই সুবিধা রাখা হচ্ছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.